**************************************************************************************************************************************************** ****************************************************************************************************************************************************

বিল গেটসের জীবনযাপন বিষয়ে ২৬টি তথ্য জেনে নিন |

 

৭৮.৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ নিয়ে সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বিশ্বের শীর্ষ ধনীর স্থান দখল করেছেন বেশ কয়েক বছর আগেই। তার রয়েছে প্রাইভেট জেট বিমান থেকে শুরু করে ৬৬ হাজার বর্গফুটের বাড়ি পর্যন্ত বিলাসবহুল বহু উপকরণ। আর সম্পদ ক্রমে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বহু অর্থ বিলিয়ে দিচ্ছেন জনকল্যাণে। বিল গেটসের জীবনের কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় তুলে ধরা হলো এ লেখায়।

১. বিল গেটসের জন্ম ১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যের সিয়াটলে। তার বাবা আইনজীবী ও মা স্কুলটিচার। ছোটবেলা থেকেই তার ব্যাপক জ্ঞানার্জনের আগ্রহ ছিল। এ কারণে তরুণ বয়সেই ‘ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া’ সিরিজটি তিনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছিলেন।

২. তার পিতামাতা বিলকে ভর্তি করে দেন লেকসাইড স্কুলে। এতে আরও পড়তেন মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেন। কম্পিউটার নিয়ে তার অর্জনের জন্য বিল প্রায়ই এ স্কুলটির অবদানের কথা স্মরণ করেন।

বিল গেটসের জীবনযাপন বিষয়ে ২৬টি তথ্য জেনে নিন

৩. লেকসাইড থেকে ১৯৭৩ সালে পাশ করার পর বিল গেটস হাভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। সেখানে প্রধানত আইন নিয়ে পড়তে ঢুকলেও তিনি ক্রমে অংক ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে ঝুঁকে পড়েন।

৪. হাভার্ড-এ তিনি স্টিভ বলমারের সঙ্গে পরিচিত হন। পরে এক সময় তিনি মাইক্রোসফটের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারা আজও ভালো বন্ধু।

৫. হাভার্ডে ভর্তির দুই বছর পর বিল গেটস পল অ্যালেনের সঙ্গে মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন। এরপর তিনি কখনোই ব্যাচেলর ডিগ্রি নেওয়ার জন্য ফিরে আসেননি। কিন্তু ২০০৭ সালে হাভার্ড তাকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।


বিল গেটসের জীবনযাপন বিষয়ে ২৬টি তথ্য জেনে নিন

. ছাত্র থাকা অবস্থাতেই বিল গেটস সফটওয়্যার উন্নয়ন শুরু করেন। এ সময় বিশ্বের প্রথম পার্সোনাল কম্পিউটার ‘এমআইটি অল্টেয়ার’-এর জন্য সফটওয়্যার প্রস্তুত শুরু করেন। এরপর ১৯৭৭ সালে গেটস ও অ্যালেন সফটওয়্যার কম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় অফিস স্থাপিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো রাজ্যে।

৭. ১৯৭৯ সালে গেটস ও অ্যালেন তাদের আদি বাসস্থান সিয়াটলে মাইক্রোসফটের অফিস স্থাপন করেন। এরপর অবশ্য তারা অফিস রেডমন্ডে নিয়ে যান।

৮. ১৯৮৫ সালে মাইক্রোসফট প্রথম উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম বাজারজাত করে। ১৯৮৭ সালে ৩১ বছর বয়সী বিল গেটস একজন বিলিয়নেয়ার হয়ে যান।

৯. সম্পদের পরিমাণ ক্রমে বাড়তে থাকায় ১৯৯৫ সালে বিল গেটস বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন। সে সময় তার সম্পদ ছিল ১২. ৯ বিলিয়ন ডলার। এরপর থেকে প্রতি বছরই তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী কিংবা তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে আসছেন।

১০. মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে ১৯৯৮ সালে আদালতে সফটওয়্যার মনোপলির অভিযোগ আনা হয়। এতে বিল গেটসের বিষয়ে জনগণের মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়।

১১. ভবিষ্যৎ স্ত্রী মেলিন্ডার সঙ্গে ১৯৮৭ সালে সাক্ষাৎ হয় বিল গেটসের। তিনি মাইক্রোসফটের একজন কর্মী ছিলেন। তারা ১৯৯৪ সালে বিয়ে করেন। এরপর অবশ্য জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য তিনি মাইক্রোসফট ত্যাগ করেন।


বিল গেটসের জীবনযাপন বিষয়ে ২৬টি তথ্য জেনে নিন

১২. বিল গেটস, মেলিন্ডা ও তাদের তিন সন্তান ওয়াশিংটনের একটি বড় বাড়িতে বাস করেন। ১২১ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বাড়িটিতে নানা আধুনিক ফিচার রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সুইমিং পুলে আন্ডারওয়াটার সাউন্ড সিস্টেম। বাড়িটিতে আরও রয়েছে ২৪টি বাথরুম ও ২৩টি গাড়ি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন গ্যারেজ।

১৩. বিল গেটসের বাড়িতে রয়েছে প্রচুর বইসমৃদ্ধ লাইব্রেরি। বিল গেটস একজন পড়ুয়াও বটে। তার সংগ্রহে আছে বহু দুর্লভ বই। এর মধ্যে অন্যতম হলো লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ‘কোডেক্স লেইসেস্টার’। ১৫ শতকের এ বইটি বিল গেটস ৩ কোটি ৮ লাখ ডলারে কেনেন।

১৪. গেটসের শিল্প সংগ্রহও চমৎকার। তার সংগ্রহে রয়েছে বেশ কিছু চিত্রকর্ম। ১৯৯৮ সালে তিনি ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেকর্ড মূল্যে উইন্সলো হোমার্স-এর ‘লস্ট অন দ্য গ্র্যান্ড ব্যাংক্স’ কিনে নেন।

১৫. গত বছর গেটস ৮৭ লাখ ডলার মূল্যে ফ্লোরিডায় মেডিটেরিয়ান ধাঁচের একটি বাড়ি কিনেন। বাড়িটিতে রয়েছে ঘোড়া পালনের জন্য নানা সুবিধা।

১৬. সন্তানদের সঙ্গে নানা স্থানে শিক্ষামূলক কাজে ভ্রমণ করেন বিল গেটস। ছেলেকে নিয়ে তিনি খনি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ভ্রমণ করেন। তিনি এমনকি জেনেভার ‘লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার’ও ভ্রমণ করেছেন।

১৭. বিল গেটস কিছু সময় অতিবাহিত করেন গ্রিনল্যান্ডের একটি অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পে। এটি একটি দূরবর্তী স্কি সেন্টার।

১৮. গেটসের দ্রুতগামী গাড়ির বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ আছে। তিনি ‘পোর্শে ৯৩০ টার্বো,’ মার্সিডিস, জাগুয়ার, ক্যারেরা ক্যাব্রিওলেট ৯৬৪, ও ফেরারি ৩৪৮ কিনেছেন। মাইক্রোসফটের শুরুতে তিনি ১৯৭৯ সালে ‘পোর্শে ৯১১’ কিনেছিলেন।


বিল গেটসের জীবনযাপন বিষয়ে ২৬টি তথ্য জেনে নিন

১৯. নব্বই দশকের শেষের দিকে বিল গেটস যখন পোর্শে গাড়ির একটি মডেল কেনেন তখন গাড়িটি মার্কিন কাস্টমসে আটকে গিয়েছিল। এর কারণ ছিল গাড়িটির মান তখনও মার্কিন মাপকাঠি অনুযায়ী কি না, তা প্রমাণিত হয়নি। সে সময় গেটসসহ কয়েকজন ধনী পোর্শে মালিক ক্লিনটন সরকারকে চাপ দিয়ে ‘শো অ্যান্ড ডিসপ্লে’ আইন পাশ করায়। এতে কোনো গাড়ির ঐতিহাসিক ও প্রযুক্তিগত ইতিহাস থাকলে তা যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের পরীক্ষা থেকে ছাড় পাওয়ার সুযোগ তৈরি করা হয়।

২০. বিল গেটসের অন্যতম প্রিয় শখ হলো টেনিস খেলা। তিনি নানা চ্যারিটি ম্যাচেও অংশ নেন।

২১. গেটসের ঘনিষ্ট বন্ধুদের মধ্যে রয়েছেন কিংবদন্তি বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট। বিল গেটস যখন তার সঙ্গী মেলিন্ডাকে প্রস্তাব দিতে চান তখন বাফেট সাহায্য করেছিলেন। বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে বিলিয়ন ডলার দান করেছেন বাফেট।

২২. মাইক্রোসফটের সিইও পদ থেকে ২০০০ সালে বিল গেটস চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির সিইওর প্রযুক্তি পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন।


বিল গেটসের জীবনযাপন বিষয়ে ২৬টি তথ্য জেনে নিন

২৩. জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে বহু প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে শুরু করে অভুক্ত মানুষকে খাবার পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত।

২৪. প্রাইভেট জেট বিমান কেনার জন্য ১৯৯৭ সালে গেটস দুই কোটি ১০ লাখ ডলার ব্যয় করেন। এটি তার জনকল্যাণমূলক কাজে নানা স্থানে ভ্রমণে সহায়ক হয়েছে বলে জানান তিনি।

২৫. বিল ও মেলিন্ডা ২০১০ সালে ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে মিলে ‘দ্য গিভিং প্লেজ’ নামে একটি প্রচারণা শুরু করেন। এতে তারা সহমর্মী ধনীদের তাদের অর্ধেক সম্পদ জনকল্যাণে ব্যয়ের জন্য প্রচারণা চালান। এখন পর্যন্ত এতে সম্মত হয়েছেন পল অ্যালেন, ল্যারি এলিসন, স্টিভ কেস ও মার্ক জুকারবার্গের মতো কয়েকজন শীর্ষ ধনী।

২৬. বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক ব্যবসাতেও গেটস বিনিয়োগ করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিমের বিকল্প হিসেবে উদ্ভিদ খুঁজে বের করার প্রকল্প কিংবা আগামী প্রজন্মের কনডম তৈরির মতো প্রকল্প।


No comments:

Post a Comment