**************************************************************************************************************************************************** ****************************************************************************************************************************************************
Showing posts with label কোরআন হাদিস. Show all posts
Showing posts with label কোরআন হাদিস. Show all posts

Must See this post কি ভাবে সঠিক নিয়মে নামায আদায় করবেন Must See this pos

http://www.moviezone247.ml/search?updated-max=2016-07-07T11:40:00-07:00&max-results=10
নামাজ আদায় করার নিয়ম।

১.জানামজের দোয়াঃ
অযু পরে জায়নামাজে দাড়ালে জানামজের দোয়া পরতে হবে।

ِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَالسَّمَوَتِ وَاْلاَرْضَ حَنِيْفَاوَّمَااَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ

আরবিঃ ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওজহিয়া লিল্লাযী ফাতারাচ্ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন।
Must See this post
বাংলা অর্থঃ নিশ্চই আমি তাঁহার দিকে মুখ ফিরাইলাম, যিনি আসমান জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন। আমি মুশরিকদিগের দলভুক্ত নহি।

২ নামাজের নিয়ত করাঃ
নামাজ শুরুর আগে নির্দিষ্ট নামাজের জন্য নিয়ত করা প্রত্যেক নামাজীর উপর আবশ্যক। নিয়তের স্থান হল অন্তর। মুখে উচ্চারণের মাধ্যমে নিয়ত করার প্রয়োজন নেই।

৩ কিবলামুখী হয়ে আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়ানোঃ
রাসূল সাঃ যখনই নামাজে দাঁড়াতেন, কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। তিনি বলেছেন, যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে, তখন পরিপূর্ণরূপে অযু করবে, অতঃপর কিবলামুখী হয়ে আল্লাহ আকবার বলবে।

৪ নাভির নিচে হাত রাখাঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃ নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে নাভির নিচে স্থাপন করতেন। আবু দাউদ-নাসাঈ নাভির নিচে হাত রাখাটাই ছহীহ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত। এছাড়া অন্য কোথাও রাখার হাদীছ বিশেষ করে বুকের উপর হাত রাখার হাদীস দুর্বল।

৫ ছানা পাঠ করাঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে ছানা পাঠের বিভিন্ন বাক্য প্রমাণিত আছে। সাধারণ পাঠকদের সুবিধার্থে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত এবং সহজ দু‘আটি এখানে উল্লেখ করা হল। سُبْحَانَكَ اَلَلهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَك اَسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ উচ্চারণঃ “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়াতাবারাকাস্‌মুকা ওয়া তা‘লা যাদ্দুকা ওয়া লাইলাহা গাইরুকা” অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রশংসা জড়িত পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মহানত্ব সমুন্নত। আর তুমি ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নাই”।
Must See this post
৬ সিজদায় স্থানে দৃষ্টি রাখাঃ
নবী সাঃ নামাজ অবস্থায় মাথা সোজা রেখে যমীনের দিকে দৃষ্টি রাখতেন। তাঁর দৃষ্টি সিজদায় স্থান অতিক্রম করতো না।
Must See this post
৭ কিরাত পাঠ করাঃ
কিরা‘ত পাঠ করার পূর্বে রাসূল সাঃ নীরবেأعُوْذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ উচ্চারণঃ “আউজু বিল্লাহি মিনাশ্‌শায়ত্বানির রাযীম” এবং بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ উচ্চারণঃ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করতেন। অতঃপর সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। সূরা ফাতিহা পাঠ করা নামাজের রুকন। সূরা ফাতিহা ছাড়া নামাজ হবেনা।
৮ মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ জরুরী নয়ঃ
ইমামের পিছনে মুক্তাদীগণ সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না। কারণ, কুরআনের বানী “কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা হলে তোমরা চুপ থাক। রাসূল সাঃ এর বাণী “ইমামের কিরআতই মুক্তাদির কেরাত।” মুসলিম সুতরাং মুক্তাদীগণ সূরা ফাতেহা পাঠ করবে না। এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন। হাদীসের কোথাও একথা নেই যে, মুক্তাদীদের সূরা ফাতেহা পড়তে হবে। হাদীসে আছে সুরা ফাতেহা ছাড়া নামাজ হয় না। এটি একাকি নামাজ আদাকারী ও ইমামের জন্য খাস।

৯ সূরা ফাতিহা শেষে মুক্তাদীগণ সবাই নিঃশব্দে আমীন বলবেঃ
রাসূল রাঃ যখন সূরা ফাতিহা পাঠ শেষ করতেন, তখন অনুচ্চ স্বরে আমীন বলতেন। তিরমিযী, আহমদ, হাকেম

১০ নামাজের প্রথম দু’রাকাতে সূরায়ে ফাতেহার পর অন্য সূরা মিলানো। একাকী নামাজ আদায়কারী ও ইমাম

১১ রুকূ করা প্রসঙ্গঃ
কিরা‘আত পাঠ শেষে রাসূল সাঃ আল্লাহ আকবার اَللَّهُ اَكْبَرُ বলে রুকূতে যেতন। বুখারী রুকুতে স্বীয় হাঁটুদ্বয়ের উপর হস-দ্বয় রাখতেন এবং তিনি এজন্য নির্দেশ দিতেন। বুখারী তিনি কনুই দু‘টোকে পাঁজর দেশ থেকে দূরে রাখতেন। তিনি রুকু অবস্থায় পিঠকে সমান করে প্রসারিত করতেন। এমন সমান করতেন যে, তাতে পানি ঢেলে দিলেও তা যেন সি’র থাকে। বুখারী, তিরমিজী, তাবরানী তিনি নামাজে ত্রুটিকারীকে বলেছিলেন, অতঃপর যখন রুকূ করবে, তখন স্বীয় হস্তদ্বয় হাটুদ্বয়ের উপর রাখবে এবং পিঠকে প্রসারিত করে স্থিরভাবে রুকূ করবে। আহমাদ তিনি পিঠ অপেক্ষা মাথা উঁচু বা নীচু রাখতেন না। বরং তা মাঝামাঝি থাকত। বুখারী, আবু দাউদ
রুকুর দু‘আঃ রুকুতে রাসূল সাঃ এই দূ‘আ পাঠ করতেন سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ উচ্চারণঃ ‘সুবহানা রাব্বীয়াল আযীম’। অর্থঃ আমি মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি। এই দূ‘আটি তিনি তিনবার বলতেন। কখনও তিনবারের বেশীও পাঠ করতেন। আহমাদ

১২ রুকূ থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোঃ
অতঃপর রাসূল সাঃ রুকূ হতে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। তিনি এই দূ‘আ বলতে-বলতে রুকূ হতে মাথা উঠাতেন, سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ উচ্চারণঃ সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে, আল্লাহ তার কথা শ্রবন করেন। বুখারী-মুসলিম তিনি যখন রুকূ হতে মাথা উঠাতেন, তখন এমনভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন যে, মেরুদন্ডের হাড়গুলো স্ব-স্ব স্থানে ফিরে যেত। অতঃপর তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় বলতেন, رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ উচ্চারণঃ রাব্বানা লাকাল হাম্‌দ। হে আমার প্রতিপালক! সকল প্রশংসা তোমার জন্য।

১৩ নামাজে রফউল ইয়াদাইন না করাঃ
রাফউল ইয়াদাইন অর্থ উভয় হাত উঠানো। নবী সা. এর নামাজে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অন্য কোথাও রফউল ইয়াদাইন নেই। মর্মার্থ তিরমিযী, নাসায়ী
Must See this post কি ভাবে সঠিক নিয়মে নামায আদায় করবেন Must See this pos
১৪ সিজদায় প্রসঙ্গঃ
অতঃপর রাসূল সাঃ আল্লাহ আকবার বলে সিজদায় যেতেন। তিনি বলেছেন, কারও নামাজ ততক্ষন পর্যন্ত পূর্ণ হবেনা, যতক্ষন না সে সামিআল্লাহ হুলিমান হামিদাহ বলে সোজা হয়ে দাঁড়াবে অথঃপর আল্লাহ আকবার বলবে, অতঃপর এমনভাবে সিজদায় করবে যে, তার শরীরের জোড়াগুলো সুসি’রভাবে অবস্থান নেয়। সিজদায় অবস্থায় পার্শ্বদ্বয় থেকে হস’দ্বয় দূরে রাখতেন। বুখারী, আবু দাউদ
নবী সাঃ রুকূ-সিজদায় পূর্ণাঙ্গরূপে ধীরসি’রভাবে আদায় করার নির্দেশ দিতেন।
সাজদার দূ‘আঃ সিজদায় অবস্থায় তিনি এই দূ‘আ পাঠ করতেন, سُبْحَانَ رَبِّيَ الاَعْلَى উচ্চারণঃ “সুবহানা রাব্বীয়াল আ‘লা”। অর্থঃ ‘আমি আমার সুউচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি’। তিনি এই দূ‘আটি তিনবার পাঠ করতেন। অতঃপর নবী সাঃ আল্লাহ আকবার বলে সিজদায় থেকে মাথা উঠাতেন। তিনি বলেছেন, কোন ব্যক্তির নামাজ ততক্ষন পর্যন্ত পূর্ণ হবেনা, যতক্ষন না এমনভাবে সিজদায় করবে যে, তার দেহের প্রত্যেকটি জোড়া সুস্থিরভাবে অবস্থান নেয়।
দুই সাজদার মাঝখানে বসাঃ প্রথম সিজদায় ও সাজদার তাসবীহ পাঠ করার পর ‘আল্লাহ আকবার’ বলে স্বীয় মস্তক উত্তলন করতেন। দুই সাজদার মাঝখানে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা ওয়াজিব। নবী সাঃ দুই সাজদার মধ্যবতী অবস্থায় এমনভাবে স্থিরতা অবলম্ভন করতেন, যার ফলে প্রত্যেক হাড় স্ব স্থানে ফিরে যেত। আবু দাউদ
দুই সাজদার মাঝখানে দূ‘আঃ দুই সাজদার মধ্যখানে নবী সাঃ এই দূ‘আ পাঠ করতেন,اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِىْ وَ ارْحَمْنِى وَ اهْدِنِىْ وَ عَافِنِىْ وارْزُقْنِىْ উচ্চারণঃ ‘আল্লাহুম্মাগফিরলী, ওয়ার হামনী, ওয়াহ্‌দিনী, ওয়া আফিনী ওয়ারযুকনী’ অর্থঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, দয়া কর, হিদায়াত দান কর, মর্যাদা বৃদ্ধি কর এবং জীবিকা দান কর”। এই দূ‘আ পাঠ করে নবী সাঃ আল্লাহ আকবার বলে দ্বিতীয় সিজদায় যেতেন এবং প্রথম সাজদার মতই দ্বিতীয় সিজদায় তাসবীহ পাঠ করতেন। অতঃপর আল্লাহ আকবার বলে সিজদায় থেকে মাথা উঠাতেন বুখারী এবং দ্বিতীয় রাকা‘আতের জন্য সোজা দাড়িয়ে যেতেন। আবু দাউদ

১৫ প্রথম তাশা্‌হহুদঃ
নবী সাঃ চার রাকা‘আত বা তিন রাকা‘আত বিশিষ্ট নামাজের প্রথম দুই রাকা‘আত শেষে তাশাহ্‌হুদ পাঠের জন্য ডান পা সোজ করে বাম পায়ের উপর বসতেন।বুখারী আরেক হাদীসে আছে নামাজের সুন্নাত হলো ডান পা সোজ করে বাম পায়ের উপর বসা।বুখারী তাশাহহুদের উচ্চারণঃ আত্‌তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস্‌ ছালাওয়াতু ওয়াত্বায়্যিবাতু আস্‌সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্‌ নাবিউ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু আস্‌সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্‌ সালিহীন আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু। এভাবে তাশাহ্‌হুদ পাঠ করার পর আল্লাহ আকবার বলে চার বা তিন রাকা‘আত বিশিষ্ট নামাজের বাকী নামাজের জন্য দাঁড়াবে। বাকী নামাজ পূর্বের নিয়মে সমাপ্ত করবে।

১৬ শেষ বৈঠক ও সালাম ফেরানোঃ
তাশাহ্‌হুদ পাঠের জন্য শেষ বৈঠকে বসা ওয়াজিব। বসার নিয়ম হলো ডান পা খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসা। এভাবে বসে প্রথমে আত্যাহিয়াতু পাঠ শেষে রাসূল সাঃ এর উপর দরূদ সালাত পাঠ করতে হবে।
দরূদের উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদু ম্মাযীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদু ম্মাযীদ। দরূদ পাঠ শেষে এই দূ‘আ পাঠ করতে হবে, উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসী জুলমান কাছীরাও ওয়ালা ইয়াগফিরুজ্‌ জুনুবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর্‌ রাহীম। বুখারী অতঃপর প্রথমে ডান দিকে পরে বাম দিকে সালাম “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলে ফিরিয়ে নামাজ সমাধা করবে।

ভাল থাকুন। নিয়মিত আপডেট টিউন পেতে ফেসবুক পেইজ এ লাইক দিয়ে এক্টিভ থাকুন
facebook page

যুগে যুগে মানুষ যখন অমরত্বের সন্ধানে/When people are forever in search of immortality

অমরত্ব লাভের নেশায় মানুষ সেই আদিম কাল থেকেই বিভোর রয়েছে আজও পর্যন্ত। কারও কাছে অনন্ত কালের জন্য জীবন প্রত্যাশাই হলো অমরত্ব, কারও কাছে মৃত্যুর পর তাঁর কীর্তি দিয়ে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার নামই হলো অমরত্ব আর কারও কাছে তার বয়স ধরে রাখার মাঝেই অমরত্বের স্বাদ কিংবা মৃত্যুর পর পুনর্জন্ম লাভের প্রত্যাশাই হয়তবা কারও কাছে অমরত্ব। মানুষের মরদেহকে মমি করে রাখার সময়কাল থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের ক্রিওনিক্স পদ্ধতি স
বই মানুষের অমরত্ব লাভের নেশার প্রতিফলন স্বরূপ। এমনকি র‍্যাপামাইসিন নামের এক ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে মানুষকে চিরযৌবন দেয়ার প্রত্যয়ে যা মানবদেহের কোষের উপর ক্রিয়াশীল। অসংখ্য কল্প কাহিনী লেখা হয়েছে এই অমরত্বকে কেন্দ্র করে। এমনকি বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে যাচ্ছে সময়কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। জেমস ক্যামেরুন নির্মিত এভাটার চলচ্চিত্রটির কথাও ধরা যেতে পারে, যেখানে মানুষকে যন্ত্রের সাহায্যে দেয়া হয়েছে এক ভিন্ন মানব রূপের। যার পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকবে যন্ত্রের মাধ্যমে ক্রিয়াশীল। হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড তার বিখ্যাত নোভেল শী এবং রিটার্ণ অফ শী-তেও দেখিয়েছেন অমরত্ব লাভের নেশায় আয়েশা নামক এক চরিত্রের, যে কিনা বেঁচে থেকেছে অনন্ত কাল ধরে শুধু মাত্র তার ভালোবাসার মানুষটিকে আপন করে পাওয়ার জন্য। কবি জীবনানন্দ দাশ প্রিয় স্বদেশ ভূমিকে ভালোবেসে লিখেছেন;

আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে-এই বাংলায় 
হয়তো মানুষ নয়-হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে, 
হয়তো ভোরের কাক হ'য়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে...
 





হিন্দু পুরাণ এবং মিশরীয় পুরাণের দুইজন দেবতার মূর্তির মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান 

হিন্দু ধর্মে দেবতা বিষ্ণু তাঁর দশটি রূপে আবির্ভূত হয়েছেন মানুষের কল্যাণে ব্রত হয়ে। বিষ্ণুর দশ অবতার হলো;

১. মৎস্য - মাছের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
২. কূর্ম - কচ্ছপের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৩. বরাহ - শূকরের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৪. নৃসিংহ - অর্ধনরসিংহ রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৫. বামন - বামনের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৬. পরশুরাম - পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রামের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৭. রাম - রামচন্দ্র অযোধ্যার রাজপুত্রের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৮. কৃষ্ণ - দ্বাপরযুগে ভ্রাতা বলরামের সঙ্গে অবতীর্ণ
৯. বুদ্ধ - কলিযুগে অবতীর্ণ
১০. কল্কি - সর্বশেষ অবতার, হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, কলিযুগের অন্তে তাঁর আবির্ভাব ঘটবে। 

আবার, শয়তান মানুষের অনিষ্ট সাধন করে তাদেরকে আল্লাহ্‌র পথ থেকে বিচ্যূত করার প্রত্যয়ে খোদ মহান আল্লাহ্‌ তাআলার কাছেই চেয়েছে কেয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকার শক্তি। মানব সভ্যতার শুরু থেকেই চলে আসছে অমরত্বের নেশা। অমরত্বের সন্ধানে মানুষ বহু প্রাচীন কাল থেকেই করে আসছে আলকেমি নামক এক বিশেষ শাস্ত্রের চর্চা। 

আলকেমি শব্দের উৎপত্তি আরবি আল কিমিয়া শব্দ থেকে যার প্রাচীন গ্রিক রূপ কেমিয়া। আলকেমি হচ্ছে সেই শাস্ত্র যার চর্চার মাধ্যমে লাভ করা যায় পরিপূর্ণতা, ধাতুকে পরিণত করা যায় স্বর্ণে, আর মানুষ লাভ করতে পারে অমরত্ব। আলকেমিতে দরকার একটি অদৃশ্য আধ্যাত্মিক শক্তির অতিপ্রাকৃত সাহায্য যেটা ছাড়া কোন আলকেমিক্যাল কাজ সম্পূর্ণ হবে না। এ আধ্যাত্মিক সাহায্য আসতে পারে ভাল দিক থেকে অথবা খারাপ দিক থেকে। যখন খারাপ শক্তি ব্যবহার করে করা হয় তখন তাকে বলা হয় ডার্ক আর্টস। 



গ্রীসে মারিয়া ইতিহাসের প্রথম আলকেমিস্ট হিসেবে পরিচিতি। জন্মসূত্রে ইহুদী হওয়ায় ডার্ক আর্টস সম্পর্কে তাঁর জানা ছিলো। মিশরের মেমফিস নগরীতে তাঁর সাথে পরিচয় হয় ডেমোক্রিটাস নামের একজনের সাথে, যাকে তিনি বাস্তব রসায়ন নিয়ে হালকা ধারণা দেন। ইতিহাসে ডেমোক্রিটাসের নাম এখনও স্মরণীয়। মারিয়া স্বর্ণ বানাতে পারতেন। মুসলিম বিশ্বে আলকেমি সূচনা করেন জাবির ইবনে হাইয়ান এবং প্রথমবারের মতো তিনি আধ্যাত্মিক শক্তি হিসেবে আল্লাহর সাহায্যের কথা উল্ল্যেখ করেন। তারপরের সময়টা আরেক কিংবদন্তী নিকোলাস ফ্লামেলের। যিনি তাঁর বইয়ের দোকানে একদিন এক হকারের কাছে পান আলকেমির উপর লেখা ইহুদী যুবরাজ আব্রাহাম এর একটি পান্ডুলিপি। তারপর তিনি ছুটতে থাকেন অমরত্বের সন্ধানে। একটা সময় তিনি গবেষণা করে পারদকে রূপোয় পরিণত করতে সক্ষম হন। তারপর পরিণত করতে সক্ষম হন নিখাদ স্বর্ণে। তাঁর আলকেমি গবেষণার আসল লক্ষ্য ছিলো অমরত্ব লাভ। তাঁর স্ত্রী পেরেনেল এর মৃত্যুর পর জীবনের শেষ কয়েকটা দিন তিনি আলকেমির বই লিখেই কাটিয়েছেন। এই সময়ে তিনি কবরস্থানে ঘুরে বেড়াতেন। তিনি খুব স্পষ্ট করে লিখে দিলেন, তাঁকে কোথায় কীভাবে কবর দিতে হবে। তাঁর কবরের এপিটাফে কী লেখা থাকবে সেটাও প্রস্তুত করে ফেললেন তিনি। সেই পাথরের ফলকে থাকবে অনেক অনেক চিহ্ন, আর একটি সূর্যের ছবি, একটি চাবির ছবি আর একটি বন্ধ বই এর ছবি সাথে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনারত ভঙ্গিতে আছেন এমন অবস্থায়। অবশেষে একদিন জানা গেলো ফ্লামেল মারাই গিয়েছেন। কিংবদন্তী আছে যে, একবার কিছু ডাকাতদল দুইশত বছর আগের নিকোলাসের কবর থেকে তাঁর কফিন চুরি করে। কিন্তু কবরের ভিতরে কফিন ছিলো একদম ফাঁকা। কফিন ফাঁকাই ছিলো নাকি কোন কালেই নাকি এখানে কোন দেহ ছিলো না। নিকোলাস যদি সেদিনই মারা গিয়েই থাকেন, তবে তাঁর কবর এখানে হয়নি। এটা ছিলো মূলত লোক দেখানো। কিন্তু আসলে নিকোলাসের সাথে কি হয়েছিলো, তাঁর গবেষণালব্ধ লিখিত বইয়ের পরবর্তীতে কি হয়েছিলো, কে বা কাদের তিনি সেসব দিয়ে গিয়েছিলেন কিংবা কারা সেসব পেয়েছিলো সব কিছুই রহস্য হয়ে রয়ে গেছে আজও পর্যন্ত।



আলকেমির চূড়ান্ত পর্যায় হলো একটি পদার্থ তৈরি করা, যেটি সম্পর্কে বিশ্বাস করা হয়, সেই পদার্থ দিয়ে মহাবিশ্বের সব রহস্যের সমাধান পাওয়া যাবে। সেই পদার্থের রয়েছে দুটি অংশ, প্রথমটি কঠিন আর দ্বিতীটি তরল। 

পরশ মণি বা পরশ পাথর সম্পর্কে প্রাচীন কিছু পাণ্ডুলিপি থেকে পাওয়া যায়। দুই রকমের পরশমণির কথা জানা যায়। একটি সাদা, আরেকটি লাল। সাদা পাথরের শক্তি কম আর সেটা ধাতুকে পরিণত করতে পারে রূপায়। লাল পাথরের শক্তি বেশি আর সেটা ধাতুকে স্বর্ণে পরিণত করতে পারে। লাল পাথর গুড়ো করলে এ পাথরের রঙ কমলা বা লাল এর মতো দেখায়, কিন্তু কঠিন অবস্থায় টকটকে লাল রং এর মতো দেখায়। তখন এটি থাকে স্বচ্ছ আর কাঁচের মতো। 

অমৃত সুধা বা এলিক্সির অফ লাইফ। সাদা রঙের তরল কয়েক ফোঁটা পান করলে দীর্ঘায়ু লাভ করা যায়। তবে এটিকে অমরত্বের জন্যই মূলত বানানোর চেষ্টা করা হতো। কিন্তু আসলে অমরত্ব দেয়ার মতো কোন পদার্থ তৈরি করা সম্ভব না। বড়জোর দীর্ঘায়ু হতে পারে। ফারসিতে একে বলা হয় আবে হায়াত। 



অমরত্বের সুধা বা আবে হায়াত। ইসলাম ধর্ম অনুসারে কোহেকাফ শহরের এক অমরত্বের ঝর্ণার কাহিনী। কোহেকাফ জিনদের রাজধানী শহর। জিনদের সম্পর্কে যা জানা যায়, তারা নাকি হাজার বছরের জীবন লাভ করে থাকে। তবে কি তারা এই কোহেকাফের ঝর্ণার পানি খেয়েই হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকে ! একটা সময় মানুষের আয়ু ছিলো দীর্ঘ বছরের। কিন্তু কালে কালে মানুষের সেই আয়ুকাল কমে আসলেও অমরত্বের নেশা কাটেনি। তবে আয়ুকাল যে একই যুগে সবার সমান সেটাও সঠিক নয়। কেউ হয়ত জন্মের সাথে সাথেই মারা যাচ্ছে কেউবা সত্তুর বছর, কেউবা বেঁচে থাকছে একশত বছর পর্যন্ত। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কয়েকজন নবী রাসূলদের আয়ুকাল দেখে নেয়া যাক;

হযরত আদম (আঃ) - ১০০০ বছর 
হযরত নূহ (আঃ) - ৯৫০ বছর
হযরত শোয়েব (আঃ) - ৮৮২ বছর
হযরত সালেহ (আঃ) - ৫৫৮ বছর
হযরত জাকারিয়া (আঃ) - ২০৭ বছর
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) - ১৯৫ বছর
হযরত সুলাইমান (আঃ) - ১৫০ বছর
হযরত ইসমাঈল (আঃ) - ১৩৭ বছর
হযরত ইয়াকুব (আঃ) - ১২৯ বছর
হযরত মূসা (আঃ) - ১২৫ বছর
হযরত ইসহাক (আঃ) - ১২০ বছর
হযরত হারুন (আঃ) - ১১৯ বছর
হযরত ইউসূফ (আঃ) - ১১০ বছর
হযরত ঈসা (আঃ) - ৯৫ বছর
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) - ৬৩ বছর

বাদশাহ সিকান্দার যুলকারনাইন এর রাজত্বকাল। একদিন খিজির (আঃ) জানালেন সমুদ্রের ওপারে একটি অন্ধকারের দেশ আছে। সেখানে সারাক্ষণ আঁধার থাকে। সেখানে এক গুহায় নাকি আবে হায়াতের ঝর্ণা আছে। সে পানি খেলে কেউ নাকি মরে না। যুলকারনাইন সিদ্ধান্ত নিলেন সেই পানির খোঁজে যাবেন। তিনি সাথে প্রায় ৪০০০ যুবক নিলেন। তিনি তাঁর উজির খিজির (আঃ) আর তাঁর আরেক সভাসদ ইলিয়াসকেও বললেন তাঁর সাথে আসতে। সাথে অনেক দিনের খাদ্য মজুদ নেয়া হলো। তবে, যাবার আগে সবাইকে সতর্ক করা হলো সেই মানবহীন এলাকাতে তাঁরা যেন কোন আগুন বা সেরকম আলো দিয়েনা যান। যাই হোক, তারা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সেই আঁধারে প্রবেশ করলেন। কোহেকাফ এর পার্বত্য এলাকার মাঝে সেই নির্দিষ্ট গুহা খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব। যুলকারনাইন দলে দলে ভাগ হয়ে খোঁজা শুরু করতে বললেন। আর তিনি একা যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু খিজির (আঃ) আর ইলিয়াস দুজন একসাথে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। যুলকারনাইন এক দিকে আর তাঁরা অন্য দিকে গেলেন। বাকিরাও বিভিন্ন দিকে গেল। আনুমানিক প্রায় এক সপ্তাহ সময় পার হয়ে গেল। বিভিন্ন রাত তাঁরা বিভিন্ন গুহায় কাটালেন। আর কোন দলের সাথে তাঁদের দেখাও হল না। একদিন ক্লান্ত হয়ে এক গুহায় আশ্রয় নিলেন তাঁরা দুজন। এরপর খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। শুকনো মাছ বের করলেন। খিজির (আঃ) পাশের এক ঝর্ণায় হাত ধুয়ে আসলেন। এরপর মাছটা দুভাগ করতে হাতে নিলেন। যেই তাঁর হাতের পানি মাছের গায়ে লাগলো সাথে সাথে সেই মরা মাছ জীবিত হয়ে উঠলো। তিনি বুঝলেন তাঁরা অমরত্বের ঝর্ণা খুঁজে পেয়েছেন। তিনি সেখান থেকে হাত দিয়ে পানি পান করলেন। এরপর ইলিয়াসকে ডেকে তাঁকেও খাওয়ালেন। তখন দৈবজ্ঞানে তাঁদের জানানো হলো, তাদের আয়ু কেয়ামত পর্যন্ত। তাঁরা যেন এখন থেকে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকেন। আর বাদশাহ এ পানি খেতে পারবেন না। তাঁরা সেখান থেকে চলে গেলেন। এরপর থেকে তাঁদের অবস্থান কেউ জানত না। যাই হোক, এরপর বাদশাহ আরও অনেকদিন পর সেই গুহা আর সেই ঝর্ণা আবিষ্কার করেন। এরপর সাথে করা আনা পেয়ালাতে করে তিনি পানি উঠিয়ে পান করতে গেলেন। কিন্তু পান করতে পারলেন না। তাঁর মনে হলো, তিনি একা এই পৃথিবীতে বেঁচে থেকে কী হবে ? তাঁর স্ত্রী পুত্র কন্যার সাথেই যদি তিনি না বাঁচলেন, তাহলে সে জীবনের আর অর্থ কী ? তিনি বেঁচে থাকবেন আর তাঁর স্ত্রী পুত্র কন্যা তাঁর চোখের সামনে মারা যাবে, সে হতে পারে না। তাঁরা সবাই একসাথে এ পানি খাবেন। এ কথা ভেবে তিনি সেই ঝর্ণা থেকে পানি ভরলেন তাঁর মশকে। এরপর ফিরতি যাত্রা শুরু করলেন। অন্ধকার রাজ্যে পথ ফিরে পেতে অনেক কষ্ট হলো। যখন তীরে ফিরে এলেন তখন দেখলেন অনেকেই ফিরতে পারেনি এত লম্বা সময়েও। হয়ত খাদ্যের অভাবে অনেকে মারাও গেছে যারা আঁধারে প্রবেশ করেছিলো। এরপর যারা বাকি আছে তাঁর বাহিনীর তাদের নিয়ে তিনি সমুদ্রপথে সরাসরি নিজের দেশে ফিরলেন। তিনি মশক থেকে পুরো পানি একটা সুন্দর পেয়ালায় ভরলেন। এরপর সেই পেয়ালা নিয়ে দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলেন তাঁর পরিবারের দিকে। কিন্তু ঘরের দরজার চৌকাঠে হোঁচট খেলেন। আর হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেল তাঁর পেয়ালা। আর উত্তপ্ত মেঝে শুষে নিলো সবপানি। তিনি তাকিয়েই থাকলেন সেইদিকে। তাঁর ভাগ্যে ছিলো না আবে হায়াতের পানি।

এরপর খিজির (আঃ) কে দেখা যায় মূসা (আঃ) এর সময়ে। বায়হাকি হাদিস গ্রন্থ মতে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জানাজার সময় খিজির (আঃ) এর উপস্থিত হয়েছিলেন এবং আবু বকর (রাঃ) আর আলী (রাঃ) তাঁকে চিনতে পারেন। তিনি তাদেরকে সান্ত্বনা দিতে এসেছিলেন। তাফসিরকারকদের মতে, ভবিষ্যৎবাণী মতে যে লোকটি দাজ্জালের সাথে তর্কে যাবে সেই লোকটিই হবেন খিজির (আঃ)।

কিন্তু এখানে একটি বিষয় খুব লক্ষণীয়, ইতিহাসে অনেক জায়গায় খিজির (আঃ) এর আরেকজন সাথী ইলিয়াস যিনিও পেয়েছিলেন অমরত্বের স্বাদ তাঁর ইতিহাস চর্চা তেমন কোন রেওয়াতে পাওয়া যায়না। অনেক রেওয়াতে ইলিয়াস নামের কেউ যে খিজির (আঃ) এর সাথী ছিলেন তেমন কিছুই উল্ল্যেখ নেই। আর উল্ল্যেখ থাকলেও তাঁর পরবর্তী কোন ঘটনার উল্ল্যেখ পাওয়া যায়না তেমন ভাবে। যদি খিজির (আঃ) এর মতো ইলিয়াস নামের সেই ব্যাক্তিও অমরত্বের স্বাদ পেয়ে থাকেন তবে তিনি এখন কোথায় আছেন ? কিংবা কেয়ামতের আগে তাঁর দেখা কি পাওয়া যাবে ? যেভাবে খিজির (আঃ) এর দেখা পাওয়া যাবে। কিছু কিছু রেওয়াতে এসেছে খিজির (আঃ) নাকি ইলিয়াসের সাথে দেখা করেন। যাই হোক আমার ভাবনা এখানে ইলিয়াসের মাঝে এসে রহস্য সৃষ্টি করে। জন্ম দেয় অনেক প্রশ্নের। 



মিশরীয় পুরাণ অনুযায়ী দেবী আইসিস পুত্র হোরাসও নাকি জীবনের এক পর্যায় এসে উধাও হয়ে যান। বিশ্বাস করা হয় যে হোরাস জীবিত আছেন। তিনি আবারও ফিরে আসবেন। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী বিশ্বাস করা হয় দাজ্জাল আসবে কেয়ামতের আগে। তার জন্মের কথা না বলে বলা আছে আবির্ভাবের কথা। এমনকি তার পৃথিবীতে অবস্থানের সময়কাল পৃথিবীর সময়কালের সাথে পারস্পরিক বিরোধী। তবে ধারণা করা যায় দাজ্জালের জন্ম বহু আগেই হয়েছে। সে কোথাও আত্মগোপন আছে। সময় হলে তার আবির্ভাব হবে। এমনকি ইসলাম ধর্ম এবং খ্রিষ্টান ধর্ম অনুযায়ী ঈসা (আঃ)/যীশু ফিরে আসবেন আবারও এই পৃথিবীতে। তিনি বেঁচে আছেন। এমনকি তাঁর হাতেই মৃত্যু হবে দাজ্জালের। এমনকি হিন্দু ধর্মেও বলা আছে দেবতা বিষ্ণু পৃথিবীর শেষ সময়ে কল্কি রূপে আবির্ভূত হবেন। সে যাই হোক, সবগুলো ঘটনা জন্ম দেয় নানা রকমের রহস্যের। একদিন হয়ত ঠিকই সব রহস্যের জট খুলে যাবে ঠিকই। যীশুর কথা আসতেই মনে হলো হলি গ্রেইলের কথা। অমরত্ব লাভের আরেকটি পুরাণ হলো হলি গ্রেইল। হলি গ্রেইল হলো সেই পেয়ালা যেটাতে করে যীশুর ক্রুশবিদ্ধ দেহের রক্ত ধারন করা হয় আর যেটাতে করে পানি খেলে অমরত্ব পাওয়া যাবে।



বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী, কেয়ামতের পূর্বে ঈসা (আঃ) এবং দাজ্জালের মাঝে যে যুদ্ধ হবে সেগুলো হবে ২০৬০ সালের আশেপাশে। এক পাণ্ডুলিপিতে বিজ্ঞানী নিউটন লিখে গেছেন, তিনি হিসেব করে বের করেছেন ২০৬০ সালের আগে কোন মতেই কেয়ামত হবে না। 



স্যার আইজ্যাক নিউটন বিশাল গবেষণা করেন সলোমনের এ টেম্পল নিয়ে। তিনি হিব্রু থেকে নিজে সব অনুবাদ করেন। নিজের হাতে টেম্পল অফ সলোমনের স্ট্রাকচারাল ডিজাইন আঁকেন। জেরুজালেমের বাইতুল মুকাদ্দাস একাধারে মুসলিম, ইহুদী আর খ্রিষ্টান সবার কাছেই পবিত্র। নবী সোলায়মান (আঃ) এর নির্মিত উপাসনালয় টেম্পল অফ সলোমন ছিলো এখানে। সেটা ধ্বংস করে দেবার পরে ধ্বংসস্থলে বর্তমান সোনালি গম্বুজের এক উপাসনালয় গড়ে তোলা হয়। তবে সোনালি গম্বুজের উপাসনালয়টি আল আক্সা মসজিদ নয়। মূল আল আক্সা মসজিদ ভেঙে এখন সেখানে নতুন করে সলোমন টেম্পল বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে। মসজিদুল আল আক্সার কাছের এ জায়গা থেকেই হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মেরাজ সংঘটিত হয়। যা বাইতুল মুকাদ্দাস নামে হিব্রু ভাষায় পরিচিত। এখানে আছে ডোম অফ দ্যা রক কিংবা মসজিদ কুব্বাতুস সাখ্রা। সাখ্রা হলো পাথর বা রক। এখন যে গম্বুজ এর মতো আছে সেটা নবীজির সময় ছিলো না। আর উপরের এই জায়গা থেকেই প্রিয় নবী মেরাজে যান বোরাকে চড়ে। যে পাথরে চড়ে যান, সেটা ওখানে আছে। সেই পাথরের নামেই এর নাম করণ করা হয়। উল্লেখ্য, টেম্পল অফ সলোমনেই সেই আর্ক অফ দ্যা কভেন্যান্ট সিন্দুক রক্ষিত থাকত। একটা সময় নাইট টেম্পলারদের আর্ক অফ দা কভেন্যান্ট সিন্দুক খুঁজে বের করা আর সাথে সাথে উপকথার হলি গ্রেইল খুঁজে বের করাও ছিলো প্রধান লক্ষ্য। নাইট টেম্পলাররা টেম্পল অফ সলোমনের কাছে থাকার জন্য দ্বাদশ শতকে তাদের উপাসনালয় বানায় বাইতুল মুকাদ্দাসের মসজিদুল আক্সাকে। 



ইহুদীরা অনেক দিন ধরে টেম্পল অফ সলোমন আবারও বানাতে চাচ্ছে। এখন যেটি প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া মূল আল আক্সা মসজিদ সেটা পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারলেই তারা সেটা বানাতে পারবে। তাদের ভবিষ্যৎবাণী মতে, তাদের মসিহ দাজ্জাল জেরুজালেমের এই টেম্পল থেকেই পৃথিবী শাসন করবে। তারপরেই ইমাম মাহদির সাথে যুদ্ধ হবে আর হযরত ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে হত্যা করবেন। বাইবেলে অনুসারে এ যুদ্ধের নামই আরমাগেডন।



বিজ্ঞানি নিউটন তার যত বৈজ্ঞানিক গবেষণা করেছেন তারচেয়ে অধিক সময়ে তিনি নিমগ্ন হয়ে থাকতেন ভিন্ন এক জগৎ নিয়ে। তবে সে জগতের গবেষণা তার মৃত্যুর আগে প্রকাশিত হয়নি। জীবনের এক পর্যায় তিনি বাইবেলের তাফসির লেখা শুরু করেন। তবে এ লেখা প্রকাশিত হয় তাঁর মৃত্যুর অর্ধ শতাব্দী পর। স্যার আইজ্যাক নিউটন ঘুমের মধ্যেই মারা যান। মারা যাবার পর তাঁর চুল পরীক্ষা করে অত্তাধিক পারদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে নিউটনের অপ্রকাশিত লেখাগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। আলকেমির জন্য জীবনের বেশির ভাগ সময় পার করে দেয়া নিউটনের অজানা সব দিক প্রকাশ পেতে থাকে। দশ লক্ষেরও বেশি শব্দ নিউটন লিখে গেছেন কেবল এই আলকেমির ফিলোসফারস স্টোন এর উপর। একবার তাঁর ল্যাবরেটরি আগুনে পুড়ে যাবার পর তিনি ভেঙে পড়েন। তাঁর বেশির ভাগ আলকেমিক্যাল লেখা পুড়ে যায় সেই আগুনে। বলা হয়, দুর্ঘটনাবশত তাঁর কুকুর ডায়মন্ড সেই আগুনের সূত্রপাত করে। আগুন লেগে যায় নিউটনের সব গবেষণায়। তিনি আবারো তাঁর কাজ শুরু করেন। একটা সময় নিউটন পাগলামির লক্ষণ প্রকাশ করা শুরু করেন। আর এর জন্য দায়ী ছিলো অতিরিক্ত পারদের উপস্থিতি। লাল গুঁড়ো প্রস্তুতির সূত্রগুলোর ধাপগুলো ছিল পারদে বারবার তাপ প্রয়োগ এবং শীতলীকরণ প্রক্রিয়া। এজন্যই তাঁকে বেশি সময় কাটাতে হয়েছিলো পারদের সংস্পর্শে। তাঁর মৃত্যুর পর সেই লাল গুঁড়ো এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিংশ শতাব্দীতে খুঁজে পাওয়া নিউটনের এসব আলকেমিক্যাল পাণ্ডুলিপি পড়ে যেটা বোঝা গেছে তা হলো, নিউটনের আলো আর মহাকর্ষ বিষয়ক গবেষণাগুলো আলকেমিক্যাল গবেষণা থেকেই পাওয়া। বিজ্ঞানের প্রতিটি স্তরেই রয়েছে তাঁর অসামান্য অবদান। কিন্তু তাঁর সারা জীবনের যত গবেষণা তার অল্প একটা অংশই ছিল বিজ্ঞান নিয়ে। তারচেয়ে অনেক বেশি সময় তিনি ব্যয় করেছেন অতীন্দ্রিয় আর অতিপ্রাকৃত অমরত্বের সন্ধানে। শেষ বয়সে পাগল হয়ে মারা যান ইতিহাসের শেষ আলকেমিস্ট স্যার আইজ্যাক নিউটন। 

তথ্যসূত্রঃ

উইকিপিডিয়া, লাইট অফ ইসলাম, রিচার্ড ক্যাসেরোর লেখা রিটেন ইন স্টোনঃ ডিপার ট্রুথ, এবং আবদুল্লাহ ইবনে মাহমুদ এর আর্টিকেল। 

কখনো কি আপনার মনে প্রশ্ন যেগেছে যে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘূরে না কি সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘূরে!!

প্রশ্নঃ-(ক)সূর্য কি পৃথিবীর চার দিকে ঘুরে ?

জবাবঃ-(১)ইসলামি শরিয়তের প্রকাশ্য দলিলগুলো অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে- পৃথিবী নয়, সূর্যই আসলে পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘূরে । এই ঘূরার কারনেই পৃথিবীতে দিবা-রাত্রির আগমন ঘটে। আমাদের হাতে নিম্নোক্ত
এই দলিলগুলোর চেয়ে বেশি শক্তিশালী এমন অন্য আর কোন দলিল নেই , যার মাধ্যমে আমরা সূর্য ঘূরার দলীলগুলোকে ব্যাখ্যা করতে পারি । সূর্য ঘূরার দলিলগুলো হলো –

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র আল-কোরআনে এভাবে বলেন,

(فـَااِنَّ  اللهَ يـأَتـيِ باِ لشَّـمـس مِن المَـشـرِقِ فَـأتِ بـِهـاَ مِـن المَغرِبِ)

“আল্লাহ তাআ’লা সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন । তুমি পারলে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর।” (সুরা বাকারাঃ২৫৮) সূর্য পূর্ব দিক থেকে উঠার মাধ্যমে প্রকাশ্য দলিল পাওয়া যায় যে, সূর্য পৃথিবীর উপর পরিভ্রমন করে বা সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘূরে।

জ়বাবঃ-(২) আল্লাহ তাআ’লা বলেন, (فَـالـَمَّا رَأي الشـَّمـسَ باَزِغَـةً  قَالَ هَـذََا رَبـيِّ هَـذَا أَكـبَـرُ فَـالـَمّـًا أَفَـالـَت قلَ يَاقَـومِ اِنـّي بَــرِيءُُّ مّـِمـاَّ تُـشــرٍكُــونَ (سورة النعم: 78))

“অতঃপর যখন সূর্যকে চকচকে অবস্থায় উঠতে দেখলেন তখন বললেন, এটি আমার পালনকর্তা, এটি বৃহত্তর। অতপর যখন তা ঢুবে গেল , তখন বলল হে আমার সম্প্রদায় ! তোমরা যেসব বিষয়ে শরীক কর আমি ওসব থেকে মুক্ত।” (সুরা আনআ’মঃ৭৮) এখানে নির্ধারণ হয়ে গেল যে , সূর্য অদৃশ্য হয়ে যায়। একথা বলা হয়নি যে, সূর্য থেকে পৃথিবী ডুবে গেল। পৃথিবী যদি ঘূরত তাহলে অবশ্য তা বলা হত।

জবাবঃ-(৩) মহান আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেন, (وَتَرَي الشَّمسَ اِذَا طَلَعَت تـَتَـزَا وَرُ عَـن كـَهـفِـهـِم ذَاتَ اليـَمِـينِ وَاِذَا غـَرَبـَت تـَقـرِضُهُم ذَاتَ الشـِّــمَـالِ (سورة الكهف :17)) অর্থাৎ-“তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয় , তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায় ,  তাদের থেকে পাশ কেটে বাম দিকে চলে যায় (সুরা আল-কাহাফঃ১৭)।” পাশ কেটে ডান দিকে বা বাম দিকে চলে যাওয়া প্রমাণ যে, নড়াচড়া সূর্য থেকেই হয়ে থাকে পৃথিবী থেকে নয়। পৃথিবী যদি নড়াচড়া করত তাহলে অবশ্যই বলতেন – সূর্য থেকে গুহা পাশ কেটে যায়।  উদয় হওয়া এবং অস্ত যাওয়া এখানে সূর্যকে নির্দিষ্ট করে সম্পৃক্ত করা হয়েছে । এটা থেকেও বুঝা যায় যে, আসলে সূর্যই ঘূরে , পৃথিবী নয় ।

জবাবঃ-(৪) আল্লাহ সোবহানা তাআ’লা পবিত্র আল-কোরআনে বলেন, (وَهُوَ الَّـذِي خَـلـَـقَ االَّـيلَ وَ النَّهـاَرَ وَالشـَّـمـسَ وَ القَـمَـرَ كُـلِّ فـي فَـلـَكٍ يَـسـبَحُونَ  (سورة النبِـيَاءِ :33))  “এবং  তিনিই দিবা-নিশি এবং চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন । সবাই আপন আপন কক্ষ পথে বিচরণ করে (সূরা আল- আম্বিয়াঃ৩৩) ইবনে আব্বাস বলেন, লাটিম যেমন আপন কেন্দ্র বিন্দুর চার দিকে ঘূরতে থাকে , সূর্যও তেমনিভাবে ঘূরে।

জবাবঃ-(৫) আল্লাহ বলেন-(يُغـشِـي الـلـَّيـلَ النَّـهـَارَ يَـطلـُـبُـهُ حَـثِـيـثـًا(سورة العراف :54)) অর্থ-“তিনি রাতকে আচ্ছাদিত করেন দিনের মাধ্যমে।দিন দৌড়ে দৌড়ে রাতের পিছনে আসে(সুরা আ’রাফঃ৫৪)।” এ আয়াতে রাতকে দিনের অনুসন্ধানকারী বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনুসন্ধানকারী পিছনে পিছনে দ্রুত অনুসন্ধান করে থাকে।এটা জানা কথা যে, দিবা-রাত্রি সূর্যের অনুসারী।

জবাবঃ- (৬) মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-

(خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَ الأَرضَ بِالحَقٌّ يُكَـوِّرُ اللَّيلَ علي النَّهَارِ وَيُكَوٍّرُ النَّهارَ علي اللَّيلِ وَ سَخَّارَ الشَّمسَ وَ القَمَرَ كُلُّ يَجرِي لِأَجَلٍ مُسمَّي ألَا  هُوَ العَزِيزُ الغَفَّار( سورة الجمار:5))অর্থঃ “তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দিয়ে আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দিয়ে আচ্ছাদিত করেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন। প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত।জেনে রাখুন , তিনি পরাক্রমশালী , ক্ষমাশীল(সুরা যুমারঃ৫)।” আয়াতের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, পৃথিবীর উপরে দিবা-রাত্রি চলমান রয়েছে। পৃথিবী যদি ঘুরতো তাহলে তিনি বলতেন , দিবা-রাত্রির উপর পৃথিবীকে ঘূরান। আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “সূর্য এবং চন্দ্রের প্রত্যেকেই চলমান।” এ দলীলের মাধ্যমে জানা গেল যে, সুস্পষ্টভাবেই সূর্য ও চন্দ্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করছে। এ কথা সুস্পষ্ট যে, চলমান বস্তুকে বশীভূত করা এবং কাজে লাগানো, একস্থানে অবস্থানকারী বস্তুকে কাজে লাগানোর চেয়ে অধিক যুক্তিযুক্ত।

জবাবঃ-(৭) আল্লাহ বলেন, (وَ الشَّـمـسِ وَ ضُحَاهَا وَالقـَمَـرِ اِذَا تـَلـَاهَـا(سورة الشَّمس:1-2)) অর্থঃ “শপথ সূর্যের ও তার কিরণের, শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে(সুরা আশ-শামশঃ১-২)।” এখানে বলা হয়েছে যে, চন্দ্র সূর্যের পরে আসে।পৃথিবী যদি চন্দ্র বা সূর্যের চার দিকে ঘূরত, তাহলে চন্দ্র সূর্যকে অনুসরণ করত না। বরং চন্দ্র একবার সূর্যকে, আর সূর্য একবার চন্দ্রকে অনুসরণ করত।কেননা  সূর্য চন্দ্রের অনেক উপরে।এই আয়াত দিয়ে পৃথিবী স্থীর থাকার ব্যাপ্যারে দলীল গ্রহণ করার ভিতরে চিন্তা-ভাবনার বিষয় রয়েছে।

জবাবঃ-(৮)মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন, وَ الشَّمسُ تَجرِي لِمُستَقَرِّ لَهَا) ذَلِكَ تَقدِيرُ العَزِيز العَلِيمِ , وَ القَمَرَ قَدَّرنَاهُ مَنَزِلَ حَتَّي عَادَ كَالعُرجُونِ القَدِيمِ, لَا الشَّمسُ يَنبَغَي لَهَا أَن تُدرٍكض القَمَرَ وَلَا اللَّيلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسبَحُونَ(سورة يس:38-40)) অর্থঃ “সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্ত্ন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর নির্ধারণ। চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মঞ্জিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পরাতব খর্জুর শাখার অনুরুপ হয়ে যায়। রাতের পক্ষেও দিনের অগ্রবতী হওয়া সম্ভব নয়। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে পরিভ্রমন করে(সুরা ইয়াসিনঃ৩৮-৪০)।” এখানে সূর্যের চলা এবং এই চলাকে মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর নির্ধারণ বলে ব্যাখ্যা করা এটাই প্রমাণ করে যে, সূর্য প্রকৃতই চলমান। আর এই চলাচলের কারণেই দিবা-রাত্রি এবং ঋতুর পরিবর্তন হয়। যদি পৃথিবী ঘূরত, তাহলে পৃথিবীর জন্য মঞ্জিল নির্ধারণ করা হত। চন্দ্রের জন্য নয়। সূর্য কর্তৃক চন্দ্রকে ধরতে না পারা এবং দিনের অগ্রে রাত থাকা সূর্য, চন্দ্র এবং রাতের চলাচলের প্রমাণ বহন করে।  

জবাবঃ-(৯) নবী (সাঃ) সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আবু যর (রাঃ)কে বলেছেন , أتـَدري أَينَ تذهَبُ قُلتُ اللهُ وَرَسُولُهُ  أَعلَمُ قَلَ فَااِنَّهَا تَذهَبُ حَتَّي تَسجُدَ تَحتَ العَرشِ فَتَستأَذِنَ فَيؤذَنُ لَهَا وَيُوشِكُ أَنَّ تَسجُدَ فَلَا يُقبَلَ مِنهَا وَتَستَأَذِنَ فَلَا يُؤذَنَ لَهَا يُقََالُ لَهَا ارجِعِي مِن حِيثُ جِئتِ فَتَطلُعُ مِن مَغرِبهَا

অর্থঃ “হে আবু যর! তুমি কি জান সূর্য যখন অস্ত যায় তখন কোথায় যায় ? আবু যর(রাঃ) বললেন, আল্লাহ এবং তার রাসূল (সাঃ)ই ভাল জানেন । রাসূল (সাঃ) বললেন, সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আরশের নিচে গিয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং পুনরায় উদিত হওয়ার অনুমতি চায়।সে দিন বেশি দূরে নয়, যে অনুমতি চাইবে কিন্ত তাকে অনুমতি দেয়া হবে না । তাকে বলা হবে যেখান থেকে এসেছ , সেখানে ফেরত যাও। অতঃপর সূর্য পশ্চিম দিক থেকেই উদিত হবে।”১ এটি হবে কিয়ামতের পূর্ব মুহুর্তে। আল্লাহ সূর্যকে বলবেন, যেখান থেকে এসেছ, সেখানে ফেরত যাও।অতঃপর সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে । অতএব সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, সূর্য পৃথিবীর উপর ঘূরছে এবং এই ঘূরার মাধ্যমেই উদয়-অস্ত সংগঠিত হচ্ছে।

জবাবঃ(১০)



নোটঃ১- সহি বুখারী , অধ্যায়ঃ বাদউল খালক। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঈমান।
সুত্রপাত ঘটেছে

ইসলাম ধর্মে শুকরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ কেন?

ডাঃ জাকির নায়েক
এটা সর্বজন বিদিত যে, শুকুরের মাংস ভক্ষণ ইসলামে নিষিদ্ধ। নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো এই নিষিদ্ধতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরবে।

ক. কুরআনে শুকুরের মাংস নিষিদ্ধতা

শুকুরের মাংস খাওয়া নিষেধঅন্তত চারটি স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে ২:১৭৩, ৫:৩, ৬:১৪৫, এবং ১৬:১১৫।



“নিষিদ্ধ করা হলো তোমাদের জন্য (খাদ্য- হিসেবে) মৃত জন্তুর মাংস, প্রবাহিত রক্ত, শুকুরের মাংস কেন নিষেধ করা হয়েছে তার সন্তোষজনক উত্তরের জন্য কুরআনের উল্লেখিত আয়াত সমূহেই যথেষ্ট।

খ. বাইবেল শুকুরের মাংস ভক্ষণের নিষিদ্ধতা

একজন খ্রীস্টান তার ধর্মগ্রন্থ সমূহের উল্লেখ দেখে সন্তুষ্ট হলে দেখতে পাবে যে, বাইবেল ‘লেভীটিকাস্থ গ্রন্থে শুকুরের মাংস খেতে নিষেধ করেছে। বলা হয়েছেঃ

এবং শুকুর যদিও তার খুর দ্বিখন্ডিত এবং খুরযুক্ত পদ বিশিষ্ট। এমন কি সে চিবিয়ে খায়, যাবর কাটেনা। (তবু) ওটা অপরিচ্ছন্ন (অপবিত্র) তোমার জন্য”।

একই গ্রন্থের ১১ অধ্যায় ৭ ও ৮ স্তবকে বলা হয়েছেঃ

ওগুলোর মাংস তুমি খাবে না এবং ওগুলোর মৃতদেরহ তুমি স্পর্শও করবে না, ওগুলো ‘অপবিত্র’ তোমার জন্য।

বাইবেলের পঞ্চম গ্রন্থ ‘ডিউট্যারনমী’ তেও শুকর মাংস ‘অপবিত্র’ বলা হয়েছেঃ

“আর শুকর- কারণ তার খুর দ্বিখন্ডিত, এমনকি চিবিয়ে খায়, যাবর কাটেনা, ওটা অপবিত্র তোমার জন্য তুমি ওগুলোর মাংস খাবে না, না ওগুলোর মৃতদেহ তুমি স্পর্শ করবে। (ডিউট্যারনমীঃ ১৪:৮)

বাইবেলের ‘আইযায়াহ, গ্রন্থের ৬৫ অধ্যায় ২ থেকে ৫ স্তবকেও একই নিষিদ্ধতা।

গ. শুকরের মাংস ভক্ষণ বেশ কিছু মারাত্নক রোগের কারণ

অন্যান্য অমুসলিম ও নাস্তিকরা হয়তো উপযুক্ত কারণ ও বিজ্ঞানের যুক্তি প্রমাণের মেনে নিতে পারে- শুকুর মাংস ভক্ষণ কমপক্ষে সত্তুরটি রোগের উদ্ভব ঘটাতে পারে। প্রথমতঃ আক্রান্ত হতে পারে বিভিন্ন প্রকার ক্রিমির দ্বারা। যেমন বৃত্তাকার ক্রিমি, ক্ষুদ্র কাঁটাযুক্ত ক্রিমি এবং বক্র ক্রিমি। এর মধ্যে সবচাইতে ভয়ঙ্কর ও মারাত্মক হলো ‘টাইনিয়া সোলিয়াম’। সাধারণভাবে যেটাকে ফিতা ক্রিমি’ বলা হয়। এটা পেটের মধ্যে বেড়ে ওঠে এবং অনেক লম্বা হয়। এর ডিম রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে এবং দেহের প্রায় সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ঢুকে পড়তে পারে, যদি এটা মস্তিস্কে ঢোকে, তাহলে কারণ ঘটাতে পারে স্মৃতি ভ্রষ্ট হয়ে যাবার। হৃদ-যন্ত্রের মধ্যে ঢুকলে বন্ধ করে দিতে পারে হৃদযন্ত্রক্রিয়া। চোখে ঢুকতে পারলে অন্ধত্বের কারণ , কলিজীতে ঢুকতে পারলে সেখানে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি করে অর্থাৎ এটা শরীরের যে কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

এরপরও আছে আরো ভয়ঙ্কর ‘ত্রীচুরা টিচুরাসীস্থ। এ সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা হলো ভালো করে রান্না করলে এর ডিম্ব মারা যায়। এর ওপরে আমেরিকায় গবেষণা চালানো হয়েছে। ফলাফল ভালো করে রান্না করার পরও প্রতি ২৪ জনের ২২ জন এই ‘ত্রীচুরাসীস্থ দ্বারা আক্রান্ত। প্রমাণিত হলো সাধারণ রান্নায় এ ডিম্ব ধ্বংস হয় না।

ঘ. শুকরের মাংসে চর্বি উৎপাদনের উপাদান প্রচুর

শুকর মাংসে পেশী তৈরীর উপাদান অত্যন্ত নগণ্য পরিমাণ। পক্ষান্তরে চর্বি উৎপাদনের উপাদান প্রচুর। এ জাতীয় চর্বি বেশিরভাগ রক্ত নালীতে জমা হয়- যা কারণ ঘটায় হাইপার টেনশান এবং হার্ট এটাকের। অবাক হবার কিছু নেই যে ৫০% ভাগ আমেরিকান হাইপার টেনশানের রুগী।

ঙ. পৃথিবীর বুকে শুকর নোংরা ও পঙ্কিলতম প্রাণী

এ প্রাণীটি বসবাস করতে সাচ্ছন্দ বোধ করে নিজেদের বিষ্ঠা, মানুষের মল ও ময়লাপূর্ণ জায়গায়। আল্লাহ তা‘আলা সমাজবদ্ধ সৃষ্টি কূলের ধাঙর, মেথর বা ময়লা পরিষ্কারক হিসাবেই বোধকরি এ প্রাণিটি সৃষ্টি করেছেন আজ থেকে পঞ্চাশ কি ষাট বছর আগেও যখন সেনিটারী পায়খানা আবিষ্কৃত হয়নি তখন যে কোনো শহরের পায়খানার ধরন ছিল, পেছন থেকে মেথর এসে তা ট্যাঙ্কি ভরে নিয়ে যেত এবং শহরের উপকণ্ঠে কোথাও ফেলতো। যা ছিল শুকরদের পরম আনন্দ নিবাস এবং শেষ পর্যন্ত সেগুলোই সব বিষ্ঠার রুপান্তর ঘটতো।

অনেকেই হয়তো এখন বিতর্কে নেমে পড়বেন উন্নত বিশ্বে এখন শুকরের পরিচ্ছন্ন খামার করা হয়েছে যেখানে ওগুলো লালিত পালিত হয়। তাদের এই অনেক উন্নত, স্বাস্থ্যকর খামারেও ওগুলো নোংরা। অত্যন্ত আনন্দের সাথেই ওরা ওদের নিজেদের ও সঙ্গিদের বিষ্ঠা নিয়ে ওদের চোখা নাক দিয়ে নাড়া চড়া করে আর উৎসবের খাদ্য হিসেবেই খায়।

চ. শুকর নির্লজ্জতায় জঘন্য পশু

ভু-পৃষ্ঠের ওপরে শুকর অশ্লীলতায় নির্লজ্জতম প্রাণী। একমাত্র পশু যেটা তার স্ত্রী-সঙ্গীর সাথে সংগম করার জন্য অন্যান্য পুরুষ-সঙ্গীদের ডেকে নেয়। আমেরিকার ও ইউরোপের অধিকাংষ মানুষের প্রিয় খাদ্য শুকর মাংস। খাদ্যভ্যাস আচরণে প্রকাশ পায়, বিজ্ঞানের এ সূত্রের জীবন্ত নমুনা ওরাই। ওদের প্রিয় সংস্কৃতি ডান্স পার্টি গুলোতে নেচে নেচে উত্তেজনার উত্তুঙ্গে উঠে একে অপরের সাথে ‘সোয়া’র জন্য বউ বদল করে নেয়। অনেকেই আবার জীবন্ত নীল ছবি চোখে দেখার জন্য স্ত্রীর সাথে সংগম করতে বন্ধু-বান্ধব ডেকে নেয়। তারপর এক নারী নিয়ে চলে অনেক পুরুষের সম্মিলিত লীলাখেলা। ধন্য উন্নত বিশ্ব, ধন্য তার সর্বোন্নত সংস্কৃতি।

ড়া. জাকির নায়েক এর উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তরসমূহ


আগামী কাল থেকে পুজা শুরু তাই মাল্লু ভাইদের জন্য শুভেচ্ছা ও মুসলিম ভাইদের জন্য কড়া হুশিয়ারি


প্রশ্নঃ হিন্দুদের পূজার উৎসবে যাওয়া ও পুজার
প্রসাদ খাওয়া হালাল না হারাম?
.
উত্তরঃড.জাকির নায়েক স্যার
এই প্রস্বাদ নামক খাবারটা দেওয়া হয় হিন্দু
মনগড়া নকল ঈশ্বরের উদ্দেশ্য। অর্থাৎ হিন্দুরা নিজের হাতে নির্মিত বিভিন্ন মূর্তির, যার কোন ক্ষমতাই নেই, সেই নকল ঈশ্বরের উদ্দেশ্য
প্রসাদ দেয়। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুর'আনের মোট চার জায়গায় উল্লেখ করেছেন-
* সূরাহ বাকারার ১৭৩
নং আয়াতে,
* সূরাহ মায়িদাহ’র ৩
নং আয়াতে,
* সূরাহ আন’আমের
১৪৫ নং আয়াতে,
এছাড়াও
* সূরাহ নাহলের ১১৫
নং আয়াতে উল্লেখ
করা হয়েছে,
.
“আল্লাহ্ তোমাদের জন্য হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের মাংস খাওয়া। আর যে পশু
জবাই করার সময় আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নাম নেয়া হয়েছে” অর্থাৎ যা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য
কারো নামে উৎসর্গ করা হয় সেটা আমাদের জন্য আল্লাহ্ হারাম করে দিয়েছেন। আর এই কারনেই পূজার প্রস্বাদ খাওয়া হারাম।
.
* এখন আসি পূজার অনুষ্ঠানে মুসলিমদের যাওয়ার বিষয়ে- আমাদের দেশে যখন হিন্দুদের পূজার উৎসব চলতে থাকে তখন অনেক মুসলিম-ই তাদের ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে। ঐ অনুষ্ঠানে উপভোগ করে।অনেকে উৎসুক
ভাবেই যায়। ঐ সমস্ত মুসলিমদের যদি বলি- ভাই হিন্দুদের পূজায় অংশগ্রহন করো না, উৎসুক ভাবেও যেও না, তাদের দেব-দেবীর
নামে উৎসর্গকৃত প্রসাদও খেওনা।
.
তখন তারা উত্তরে খুব বুক ফুলিয়েই বলে-গেসি তো কি হয়েছে?
গেলেই কি আমি হিন্দু হয়ে যাব? আমার ঈমান ঠিক আছে।এখন একটু ভেবে দেখুন,মূর্তিপূজা হচ্ছে আল্লাহর সাথে শির্ক করা।আর শির্ক হচ্ছে সবচেয়ে বড় অন্যায়, সবচেয়ে বড় অপরাধ।
.
মহান আল্লাহ বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ্র সাথে শির্ক হচ্ছে সবচেয়ে বড় অন্যায়।(সুরা লুকমানঃ ১৩)
.
আর শির্কের অপরাধ আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। মহান আল্লাহ বলেন : "নিশ্চয়ই
আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী স্থাপন করলে তাকে ক্ষমা করবেন না,কিন্তু এর চেয়ে ছোট পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন,এবং যে কেউ আল্লাহর অংশী স্থির করে, সে মহাপাপে আবদ্ধ হয়েছে।
(সূরা নিসাঃ ৪৮)।
.
এখন দেখুন,সবচেয়ে বড় অন্যায় আপনার সামনে হচ্ছে।আর রাসুল (সাঃ) বললেন-তোমাদের কেউ কোন গর্হিত/ অন্যায় কাজ 
হতে দেখলে সে যেন নিজের হাতে (শক্তি প্রয়োগে)তা সংশোধন করে দেয়,যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে তবে যেন মুখ দ্বারা তা সংশোধন করে দেয়, আর যদি তাও না পারে তবে যেন সে ঐ কাজটিকে অন্তর থেকে ঘৃণা করবে। আর এটা হল ঈমানের নিম্নতম স্তর।
[সহিহ মুসলিম,
ঈমান অধ্যায়, হাদিস
নং ৭৮]
.
অথচ আপনি ঐ অন্যায়কে বাঁধা তো দেনই না,
মনথেকেও ঘৃণা করেন না বরং ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে মনে মনে উপভোগ করেন। অন্তত মন থেকে ঘৃণা করলেও দুর্বলতম ঈমানদার হিসেবে আপনার ঈমান থাকত কিন্তু
ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে তাদের অনুষ্ঠান
মনে মনে উপভোগ করার পরেও কি আপনি দাবী করবেন যে- আপনার ঈমান ঠিক আছে?
.
তাই হিন্দুদের পূজার উৎসবে কোন মুসলিমের
যাওয়া হারাম।

হযরত ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কে যেভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো

ইমাম আবু হনিফা (রহ) মাজার

যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব ইসলামের সেবা করে অমর হয়ে আছেন। ইমামে আজম হজরত আবু
হানিফা (রহ.) তাদেরই একজন। তিনি ইসলামের জ্ঞান ভান্ডারে যে অবদান রেখে গেছেন, কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ তার কাছে চিরঋণী হয়ে থাকবে।
জন্ম ও বংশ পরিচয়

ইমাম আজমের পূর্ব পুরুষরা আদিতে কাবুলের অধিবাসী হলেও ব্যবসায়িক সূত্রে তারা কুফাতে নিবাস গড়েন। তার পিতা সাবিত ছিলেন একজন তাবেয়ি। প্রসিদ্ধ মতানুসারে তিনি ৬৯৯ ঈসায়ি সালের ৫ সেপ্টেম্বর মোতাবেক ৮০ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার মূল নাম ছিল নোমান। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আবু হানিফা উপনামে সুখ্যাতি লাভ করেন।
শিক্ষাজীবন

বিখ্যাত ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান হওয়ায় ইমামে আজম ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। লেখাপড়ার প্রতি তার কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ১৯ বা ২০ বছরের দিকে ইমাম শাবীর (রহ.) নজরে পড়েন তিনি। ইমাম শাবী (রহ.) তাকে ডেকে দ্বীনী জ্ঞান অর্জনে উৎসাহিত করেন। শাবীর ক্ষণিকের সান্নিধ্য তার জীবনের মোড় বদলে দেয়। তিনি জ্ঞানার্জনের প্রতি প্রচন্ড আগ্রহী হয়ে উঠেন। ব্যবসার পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দিয়ে জন্মভূমি কুফার বড় বড় শায়েখদের থেকে জ্ঞানার্জন করতে থাকেন। তিনি বিশেষভাবে ইমাম হাম্মাদের শিষ্যত্ব বরণ করেন। ইমাম হাম্মাদ হলেন ইবরাহিম নখঈ’র প্রিয় ছাত্র। আর ইবরাহিম ইবনে নখঈ (রহ.) হাদিস শাস্ত্র ও ইলমে শরিয়ত শিক্ষা লাভ করেছিলেন হজরত আলী (রা.) এবং হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে।
ইমাম হাম্মাদ একাধারে বিশ বছর পরম যত্নের সঙ্গে মেহনত করে নোমান ইবনে সাবিতকে ইমামে আজমরূপে গড়ে তোলেন। ইমাম আজম শুধু কুফার প্রাজ্ঞ মুহাদ্দিস ও ফকিহদের জ্ঞানভান্ডারের ওপর সন্তুষ্ট না থেকে জ্ঞান আহরণের জন্য হারামাইন শরিফাইন ভ্রমণ করেন। ১৩০ হিজরি থেকে ১৩৬ হিজরি পর্যন্ত একটানা ৬ বছর হারামাইন শরিফাইনে অবস্থান করে সেখানকার বিখ্যাত মুহাদ্দিসদের কাছ থেকে হাদিস আহরণ করেন। ঐতিহাসিকদেরর মতে তিনি প্রায় চার হাজার মুহাদ্দিস থেকে হাদিস শিক্ষা লাভ করেছিলেন।
কর্মজীবন

১২০ হিজরিতে উস্তাদ হাম্মাদের ইন্তেকালের পর তিনি উস্তাদের মাদ্রারাসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পাঠদানের পাশাপশি পৈতৃক কাপড়ের ব্যবসাও ধরে রেখেছিলেন।
তাবেয়ি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন

ইমামে আজম (রহ.) আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সান্নিধ্য ধন্য বেশ কয়েকজন সাহাবির সঙ্গলাভ করে তাবেয়ি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন- হজরত আনাস ইবনে মালেক রা. (৯৩ হি.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আউফা রা. (৮৭ হি.), হজরত সাহল ইবনে সাদ রা. (৮৮ হি.) হজরত আবু তুফাইল রা. (১১০ হি.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইদি রা. (৯৯ হি.), হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. (৯৪ হি.) ও হজরত ওয়াসেনা ইবনে আসকি রা. (৮৫ হি.)।
জীবনচিত্র

আল্লাহতায়ালা ইমাম আবু হানিফাকে অতুলনীয় জ্ঞান দান করেছিলেন। তিনি প্রচুর পরিমাণে ইবাদত-বন্দেগি করতেন। তিনি প্রায় ৫৫ বার হজব্রত পালন করেন। আদায় করেন অসংখ্য ওমরা। প্রতি রমজানে অসংখ্যবার কোরআন খতম করতেন। কথিত আছে, তিনি দীর্ঘ চল্লিশ বছর এশার নামাজের অজু দিয়ে ফজরের নামাজ পড়েছিলেন।
ব্যবসায়ী কার্যক্রমে কোনো লেনদেনের ব্যপারে সামান্যতম সন্দেহ দেখা দিলে সে লেনদেনের সম্পূর্ণ অর্থ দান করে দিতেন। সততা ও নৈতিকতা ছিল তার ব্যবসার মূলভিত্তি। উপার্জিত সম্পদের বৃহৎ একটি অংশ জনসেবায় খরচ করতেন।
অবদান
পাঠদানের দীর্ঘ জীবনে অসংখ্যা ছাত্রকে ফকিহরূপে তৈরি করেছেন। তদানীন্তন সময়ের বিশাল মুসলিম স¤্রাজ্যের প্রায় সব শহরের বিচারপতির আসন তার ছাত্ররা অলঙ্কৃত করেছিলেন। তার প্রিয় ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) ছিলেন প্রধান বিচারপতি।
ইমাম আবু হানিফার রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মুসনাদে আবু হানিফা, আল ফিকহুল আকবার, ওয়াসিয়াতু আবু হানিফা ও কিতাবুল আসার।
গবেষকদের মতে তিনি চল্লিশ হাজার হাদিস থেকে বাছাই করে কিতাবুল আসার সঙ্কলন করেছিলেন। তার সবচেয়ে বড় অবদান হলো কোরআন ও হাদিস থেকে জনসাধারণের আমল উপযোগী মাসয়ালা বের করার মূলনীতি দাঁড় করানো। তার সম্পাদিত এ শাস্ত্রের নাম উসূলুল ফিক্হ। এ কাজের জন্যই তিনি ইমামে আজম খ্যাতি লাভ করেন। তার প্রণীত ফিকাহ আমাদের কাছে ফিকহে হানাফি নামে পরিচিত।
মৃত্যু
খলিফা মনসুর তাকে প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি জালেম শাসকের সমর্থনের দায় এড়ানোর জন্য এ পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। এতে অপমানে ক্ষুব্ধ হয়ে খলিফা ইমাম আবু হানিফাকে কারাগারে বন্দী করেন। প্রতিদিন তাকে কারাগার থেকে বের করে প্রকাশ্যে দশটি করে চাবুক মারা হতো। চাবুকের আঘাতে তার শরীর থেকে রক্ত বের হতো। সে রক্তে কুফার মাটি রঞ্জিত হতো। পানাহেরর কষ্টসহ বিভিন্নভাবে সত্তর বছর বয়সের বৃদ্ধ ইমামকে নির্যাতন করা হয়। অবশেষে জোর করে বিষ পান করানো হয়। ৭৬৭ ঈসায়ি সালের ১৪ জুন মোতাবেক ১৫০ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের নিয়ামত দানে ধন্য করুন। তার রেখে যাওয়া আদর্শের ওপর আমাদের জীবন পরিচালিত করার তওফিক দান করুক। আমিন।
মুফতি মাহফূযুল হক

বিশ্বনবী হুজুর (সাঃ) এর রওজা থেকে তাঁর দেহ মোবারক চুরির চেষ্টার ভয়ংকর ঘটনা জানুন!


হিজরী ৫৫৭ সালের একরাতের ঘটনা। সুলতান নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) তাহাজ্জুদ ও দীর্ঘ মুনাজাতের পর ঘুমিয়ে
পড়েছেন। চারিদিক নিরব নিস্তব্দ। কোথাও কোন সাড়া-শব্দ নেই। এমতাবস্থায় হঠাৎ তিনি স্বপ্নে দেখলেন স্বয়ং রাসুল (স) তার কামরায় উপস্থিত। তিনি কোন ভূমিকা ছাড়াই দু’জন নীল চক্ষু বিশিষ্ট লোকের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, (নূরুদ্দীন) মাহমূদ! (এরা আমাকে বিরক্ত করছে), এ দুজন থেকে আমাকে মুক্ত কর।

এই ভয়াবহ স্বপ্ন দেখে নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গোটা কক্ষময় পায়চারি করতে লাগলেন। সাথে সাথে তার মাথায় বিভিন্ন প্রকার চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল। হৃদয় রাজ্যে ভীড় জমাল হাজারও রকমের প্রশ্ন। তিনি ভাবলেন-

আল্লাহর রাসূল তো এখন কবরে জীবনে!

তার সাথে অভিশপ্ত ইহুদীরা এমন কী ষড়যন্ত্র করতে পারে?

 কী হতে পারে তাদের চক্রান্তের স্বরুপ?
তারা কি রাসূল (স)-এর কোন ক্ষতি করতে চায়?

চায় কি পর জীবনেও তার সাথে ষড়যন্ত্র লিপ্ত হতে?

আমাকে দু’জন ইহুদীর চেহারা দেখানো হল কেন?

শয়তান তো আল্লাহর নবীর অবয়বে আসতে পারে না। তাহলে কি আমি সত্য স্বপ্ন দেখেছি?

এসব ভাবতে ভাবতে সুলতান অস্থির হয়ে পড়লেন। তিনি অজু-গোসল সেরে তাড়াতাড়ি দু’রাকাত নামায আদায় করলেন। তারপর মহান আল্লাহর দরবারে ক্রন্দনরত অবস্থায় অনেকক্ষণ মুনাজাত করলেন। সুলতানের এমন কেউ ছিল না যার সাথে তিনি পরামর্শ করবেন। আবার এ স্বপ্নও এমন নয় যে, যার তার কাছে ব্যক্ত করবেন। অবশেষে আবারও তিনি শয়ন করলেন। দীর্ঘ সময় পর যখনই তার একটু ঘুমের ভাব এলো, সঙ্গে সঙ্গে এবারও তিনি প্রথম বারের ন্যায় নবী করীম (সা)কে স্বপ্নে দেখলেন। তিনি তাকে পূর্বের ন্যায় বলছেন, (নূরুদ্দীন) মাহমূদ! এ দুজন থেকে আমাকে মুক্ত কর।

এবার নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) “আল্লাহ্, আল্লাহ্” বলতে বলতে বিছানা থেকে উঠে বসলেন। তারপর কোথায় যাবেন, কী করবেন কিছুই ঠিক করতে পা পেরে দ্রুত অজু-গোসল শেষ করে মুসল্লায় দাড়িয়ে অত্যধিক ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় দু’রাকাত নামায আদায় করলেন এবং দীর্ঘ সময় অশ্রু সিক্ত নয়নে দোয়া করলেন।

রাতের অনেক অংশ এখনও বাকী। সমগ্র পৃথিবী যেন কি এক বিপদের সম্মুখীন হয়ে নিঝুম হয়ে আছে। কী এক মহা বিপর্যয় যেন পৃথিবীর বুকে সংঘটিত হতে যাচ্ছে । কঠিন বিপদের ঘনঘটা যেন চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি মুখ তুলে আকাশ পানে তাকালেন। মনে হলো স্বপ্ন দেখা ঐ দু’জন লোক যেন তাকে ধরার জন্য দ্রুতগতিতে ধেয়ে আসছে। তিনি সেই চেহারা দুটোকে মনের মনিকোষ্ঠা থেকে সরাবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কিছুতেই তা সম্ভব হল না। শেষ পর্যন্তু নিরুপায় হয়ে নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) চোখ বন্ধ করে আবারও তন্দ্রা-বিভোর হয়ে শুয়ে পড়লেন।

শোয়ার পর তৃতীয়বারও তিনি একই ধরনের স্বপ্ন দেখলেন। রাসূল (সা)-এর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) ক্রন্দনরত অবস্থায় বিছানা পরিত্যাগ করলেন। এবার তার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাল যে, নিশ্চয়ই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক কোন না মহাবিপদের সম্মুখীন হয়েছে।

তিনি তড়িৎ গতিতে অজু-গোসল করে ফজরের নামায আদায় করলেন। নামায শেষে প্রধানমন্ত্রী জালালুদ্দীন মৌশুলীর নিকট গিয়ে গোপনীয়তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে স্বপ্নের বিবরণ শুনালেন এবং এ মুহূর্তে কী করা যায়, এ ব্যাপারে সুচিন্তিত পরামর্শ চাইলেন।

জালালুদ্দীন মৌশুলী স্বপ্নের বৃত্তান্ত অবগত হয়ে বললে, “হুজুর! আপনি এখনও বসে আছেন? নিশ্চয়ই প্রিয় নবীর রওজা মোবারক কোন কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। তাই এ বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য বারবার তিনি আপনাকে স্মরণ করছেন। অতএব, আমার পরামর্শ হল, সময় নষ্ট না করে অতিসত্তর মদীনার পথে অগ্রসর হোন।” নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) আর কালবিলম্ব করলেন না। তিনি ষোল হাজার দ্রুতগামী অশ্রারোহী সৈন্য এবং বিপুল ধন সম্পদ নিয়ে বাগদাদ থেকে মদিনা অভিমুখে রওয়ানা হলেন। রাত দিন সফর করে ১৭তম দিনে মদিনা শরীফে পৌঁছলেন এবং সৈন্য বাহিনীসহ গোছল ও অজু সেরে দু’ রাকাত নফল নামাজান্তে দীর্ঘ সময় ধরে মোনাজাত করলেন। তারপর সৈন্য বাহিনী দ্বারা মদিনা ঘেরাও করে ফেললেন এবং সঙ্গে সঙ্গে আদেশ জারী করে দিলেন যে, বাইরের লোক মদিনায় আসতে পারবে, কিন্তু সাবধান! মদিনা থেকে কোন লোক বাইরে যেতে পারবে না।

নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) জুম্মার খোৎবা দান করলেন এবং ঘোষণা দিলেন, “আমি মদিনাবাসীকে দাওয়াত দিয়ে এক বেলা খানা খাওয়াতে চাই। আমার অভিলাষ, সকলেই যেন এই দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করে।” সুলতান মদিনাবাসীকে আপ্যায়নের জন্য বিশাল আয়োজন করলেন এবং প্রত্যেকের নিকট অনুরোধ করলেন, মদিনার কোন লোক যেন এই দাওয়াত থেকে বঞ্চিত না হয়। নির্ধারিত সময়ে খাওয়া-দাওয়া শুরু হল। প্রত্যেকেই তৃপ্তিসহকারে খানা খেল। যারা দুরদুরান্ত থেকে আসতে পারেনি তাদেরকেও শেষ পর্যন্ত ঘোড়া ও গাধার পিঠে চড়িয়ে আনা হল। এভাবে প্রায় পনের দিন পর্যন্ত অগনিত লোক শাহী দাওয়াতে শরিক হওয়ার পর সুলতান জিজ্ঞাসা করলেন আরও কেউ অবশিষ্ট আছে কি? থাকলে তাদেরকেও ডেকে আন।

এই নির্দেশের পর সুলতান বিশ্বস্ত সূত্রে অবগত হলেন যে, আর কোন লোক দাওয়াতে আসতে বাকী নেই। একথা শুনে তিনি সীমাহীন অস্থির হয়ে পড়লেন। চিন্তার অথৈই সাগরে হারিয়ে গেলেন তিনি। ভাবলেন, যদি আর কোন লোক দাওয়াতে শরীক হতে বাকী না থাকে তাহলে সেই অভিশপ্ত লোক দু’জন গেল কোথায়? আমি তো দাওয়াতে শরীক হওয়া প্রতিটি লোককেই অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। কিন্তু কারও চেহারাইতো স্বপ্নে দেখা লোক দুটোর চেহারার সাথে মিলল না, তাহলে কি আমার মিশন ব্যর্থ হবে? আমি কি ঐ কুচক্রী লোক দুটোকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিতে সক্ষম হব না? এসব চিন্তায় বেশ কিছুক্ষণ তিনি ডুবে রইলেন। তারপর আবারও তিনি নতুন করে ঘোষণা করলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মদিনার সকল লোকদের দাওয়াত খাওয়া এখনও শেষ হয়নি। অতএব সবাইকে আবারও অনুরোধ করা যাচ্ছে, যারা এখনও আসেনি তাদেরকে যেন অনুসন্ধান করে দাওয়াতে শরীক করা হয়।

একথা শ্রবণে মদিনাবাসী সকলেই এক বাক্যে বলে উঠল, “হুজুর! মদিনার আশে পাশে এমন কোন লোক বাকী নেই, যারা আপনার দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করেনি।” তখন নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) বলিষ্ঠ কন্ঠে বললেন, “আমি যা বলেছি, ঠিকই বলেছি। আপনারা ভাল ভাবে অনুসন্ধান করুন।” সুলতানের এই দৃঢ়তা দেখে লক্ষাধিক জনতার মধ্য থেকে এক ব্যক্তি হঠাৎ করে বলে উঠল, “হুজুর! আমার জানামতে দু’জন লোক সম্ভবত এখনও বাকী আছে। তারা আল্লাহ্‌ওয়ালা বুযুর্গ মানুষ। জীবনে কখনও কারও কাছ থেকে হাদীয়া তোহফা গ্রহণ করেন না, এমনকি কারও দাওয়াতেও শরীক হন না। তারা নিজেরাই লোকদেরকে অনেক দান-খয়রাত করে থাকেন। নীরবতাই অধিক পছন্দ করেন। লোক সমাজে উপস্থিত হওয়া মোটেও ভালবাসেন না।”

লোকটির বক্তব্য শুনে সুলতানের চেহারায় একটি বিদ্যুত চমক খেলে গেল। তিনি কাল বিলম্ব না করে কয়েকজন লোক সহকারে ঐ লোক দুটোর আবাসস্থলে উপস্থিত হলেন। তিনি দেখলেন, এতো সেই দু’জন, যাদেরকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছিল। তাদেরকে দেখে সুলতানের দু’চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “কে তোমরা? কোথা থেকে এসেছ? তোমরা সুলতানের দাওয়াতে শরীক হলে না কেন?”

লোক দুটো নিজের পরিচয় গোপন করে বলল, “আমরা মুসাফির। হজ্বের উদ্দেশ্য এসেছিলাম। হজ্ব কার্য সমাধা করে জিয়ারতের নিয়তে রওজা শরীকে এসেছি। কিন্তু প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেমে আত্মহারা হয়ে ফিরে যেতে মনে চাইল না। তাই বাকী জীবন রওজার পাশে কাটিয়ে দেওয়ার নিয়তেই এখানে রয়ে গেছি। আমরা কারও দাওয়াত গ্রহণ করি না। এক আল্লাহর উপরই আমাদের পূর্ণ আস্থা। আমরা তারই উপর নির্ভরশীল। এবাদত, রিয়াজত ও পরকালের চিন্তায় বিভোর থাকাই আমাদের কাজ। কুরআন পাক তিলাওয়াত, নফল নামায ও অজিফা পাঠেই আমাদের সময় শেষ হয়ে যায়। সুতরাং দাওয়াত খাওয়ার সময়টা কোথায়?”

উপস্থিত জনগণ তাদের পক্ষ হয়ে বলল যে, “হুজুর! এরা দীর্ঘদিন যাবত এখানে অবস্থান করছে। এদের মত ভাল লোক আর হয় না। সব সময় দরিদ্র, এতিম ও অসহায় লোকদের প্রচুর পরিমাণে সাহায্য করে। তাদের দানের উপর অত্র লোকদের প্রচুর পরিমাণে জীবিকা নির্ভর করে।” নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) লোকদের কথা শুনে লোক দুটোর প্রতি পুনরায় গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন। অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে তাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলেন। এতে আবারও তিনি নিশ্চিত হলেন, এরা তারাই যাদেরকে তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন।

এবার সুলতান জলদ গম্ভীর স্বরে তাদেরকে বললেন, “সত্য কথা বল। তোমরা কে? কেন, কী উদ্দেশ্যে এখানে থাকছ?”

এবারও তারা পূর্বের কথা পুনরাবৃত্তি করে বলল, “আমরা পশ্চিম দেশ থেকে পবিত্র হজ্বব্রত পালনের জন্য এখানে এসেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নৈকট্য লাভই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। এ উদ্দেশ্যেই আমরা এখানে অবস্থান করছি।” সুলতান এবার কারও কথায় কান না দিয়ে তাদেরকে সেখানে আটক রাখার নির্দেশ দিলেন, অত:পর স্বয়ং তাদের থাকার জায়গায় গিয়ে খুব ভাল করে অনুসন্ধাণ চালালেন। সেখানে অনেক মাল সম্পদ পাওয়া গেল। পাওয়া গেল বহু দুর্লভ কিতাবপত্র। কিন্তু এমন কোন জিনিষ পাওয়া গেল না, যা দ্বারা স্বপ্নের বিষয়ে কোন প্রকার সহায়তা হয়।

নূরুদ্দীন জাঙ্কি(র:) অত্যধিক পেরেশান, অস্থির। এখনও রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় তিনি সীমাহীন চিন্তিত। এদিকে মদীনায় বহু লোক তাদের জন্য সুপারিশ করছে। তারা আবারও বলছে, “হুজুর! এরা নেককার বুযুর্গ লোক। দিনভর রোজা রাখেন। রাতের অধিকাংশ সময় ইবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে দেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই রওজা শরীফের নিকটে এসে আদায় করেন। প্রতিদিন নিয়মিত জান্নাতুল বাকী যিয়ারত করতে যান। প্রতি শনিবার মসজিদুল কোবাতে গমন করেন। কেউ কিছু চাইলে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না।”


সুলতান তাদের অবস্থা শুনে সীমাহীন আশ্চর্যবোধ করলেন। তথাপি তিনি হাল ছাড়ছেন না। কক্ষের অংশে অনুসন্ধানী দৃষ্টি ফিরিয়ে যাচ্ছেন। ঘরের প্রতিটি বস্তুকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। কিন্তু সন্দেহ করার মত কিছুই তিনি পাচ্ছেন না।

নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) এক পর্যায়ে সঙ্গীদের বললেন- “আচ্ছা, তাদের নামাযের মুসাল্লাটা একটু উঠাও দেখি।” সঙ্গীরা নির্দেশ পালন করল। নামাযের মুসল্লাটি বিছানো ছিল একটি চাটাইয়ের উপর। সুলতান আবার নির্দেশ দিলেন, “চাটাইটিও সরিয়ে ফেল।”

চাটাই সরানোর পর দেখা গেল একখানা বিশাল পাথর। সুলতানের নির্দেশে তাও সরানো হল। এবার পাওয়া গেল এমন একটি সুরঙ্গপথ যা বহুদূর পর্যন্ত চলে গেছে। এমনকি তা পৌছে গেছে, রওজা শরীফের অতি সন্নিকটে। এ দৃশ্য অবলোকন করা মাত্র নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) বিজলী আহতের ন্যায় চমকে উঠলেন। অস্থিরতার কালো মেঘ ছেয়ে যায় তার সমস্ত হৃদয় আকাশে। ক্রোধে লাল হয়ে যায় গোটা মুখমন্ডল। অবশেষে লোক দুটোকে লক্ষ্য করে ক্ষিপ্ত-ক্রদ্ধ সিংহের ন্যায় গর্জন করে ঝাঁঝাঁলো কন্ঠে বললেন-

“তোমরা পরিস্কার ভাষায় সত্যি কথাটা খুলে বল, নইলে এক্ষুনি তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সম্মুক্ষিন হতে হবে। বল, তোমরা কে? তোমাদরে আসল পরিচয় কী? কারা, কী উদ্দেশ্যে তোমাদেরকে এখানে পাঠিয়েছে?”

সুলতানের কথায় তারা ঘাবড়ে গেল। কঠিন বিপদ সামনে দেখে আসল পরিচয় প্রকাশ করে বলল,-

“আমরা ইহুদী। দীর্ঘদিন যাবত আমাদেরকে মুসল শহরের ইহুদীরা সুদক্ষ কর্মী দ্বারা প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রচুর অর্থ সহকারে এখানে পাঠিয়েছে। আমাদেরকে এজন্য পাঠানো হয়েছে যে, আমরা যেন কোন উপায়ে মুহাম্মদ (স)-এর শবদেহ বের করে ইউরোপীয় ইহুদীদের হাতে হস্তান্তর করি। এই দুরূহ কাজে সফল হলে তারা আমাদেরকে আরও ধনসম্পদ দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সুলতান বললেন, “তোমরা তোমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কী পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলে? কিভাবে তোমরা কাজ করতে?”

তারা বলল, “আমাদের নিয়মিত কাজ ছিল, রাত গভীর হলে অল্প পরিমাণ সুড়ঙ্গ খনন করা এবং সাথে ঐ মাটিগুলো চামড়ার মজকে ভর্তি করে অতি সন্তর্পণে মদীনার বাইরে নিয়ে ফেলে আসা। আজ দীর্ঘ তিন বৎসর যাবত এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে আমরা অনবরত ব্যস্ত আছি। যে সময় আমরা রওজা মোবারকের নিকট পৌছে গেলাম এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম যে, এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বনবীর লাশ বের করে নিয়ে যাব, ঠিক সে সময় ধরে আমাদের মনে হল, আকাশ যেন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। জমীন যেন প্রচন্ড ভূমিকম্পে থরথর করে কাঁপছে। যেন সমগ্র পৃথিবী জুড়ে মহাপ্রলয় সংঘটিত হচ্ছে। অবস্থা এতটাই শোচনীয় রূপ ধারণ করল, মনে হল সুড়ঙ্গের ভিতরেই যেন আমরা সমাধিস্থ হয়ে পড়ব। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে আমরা কাজ বন্ধ করে রেখেছি।”

তাদের বক্তব্যে সুলতানের নিকট সব কিছুই পরিস্কার হয়ে গেল। তাই তিনি লোক দুটোকে নযীর বিহীন শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন । যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এমন দু:সাহস দেখাতে না পারে। তিনি মসজিদ হতে অর্ধ মাইল দূরে একটি বিশাল ময়দানে বিশ তাহ উঁচু একটি কাঠের মঞ্চ তৈরী করলেন। সাথে সাথে সংবাদ পাঠিয়ে মদীনা ও মদীনার আশেপাশের লোকদেরকে উক্ত ময়দানে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করলেন।

নির্ধারিত সময়ে লক্ষ লক্ষ লোক উক্ত মাঠে সমবেত হল। সুলতান নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) অপরাধী লোক দুটোকে লৌহ শিকলে আবদ্ধ করে মঞ্চের উপর বসালেন । তারপর বিশাল জনসমুদ্রের মাঝে তাদের হীন চক্রান্ত ও ঘৃণ্য তৎপরতার কথা উল্লেখ করলেন।

সুলতান নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) -এর বক্তব্য শ্রবণ করে লোকজন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। তারা এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করল। সুলতান বললেন- হ্যাঁ, এদের শাস্তি দৃষ্টান্তমূলকই হবে।

তিনি লোকদেরকে বিপুল পরিমাণ লাকড়ী সংগ্রহের নির্দেশ দিলেন। তারপর লক্ষ জনতার সামনে সেই ইহুদী দুটোকে মঞ্চের নিম্নভাগে আগুন লাগিয়ে পুড়ে ভস্ম করে ফেলেন। কোন কোন বর্ণনায় আছে, সেই আগুন নাকি দীর্ঘ এগার দিন পর্যন্ত জ্বলছিল।

অত:পর তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে এক হাজার মন সিসা গলিয়ে রওজা শরীফের চতুষ্পার্শে মজবুত প্রাচীর নির্মাণ করে দেন। যেন ভবিষ্যতে আর কেউ প্রিয় নবীজির কবর পর্যন্ত পৌছাতে সক্ষম না হয়। তারপর তিনি কায়মনোবাক্যে আল্লাহ্‌পাকের শুকরিয়া আদায় করলেন এবং তাকে যে এত বড় খেদমতের জন্য কবুল করা হল সেজন্য সপ্তাহকাল ব্যাপী আনন্দাশ্রু বিসর্জন দিলেন।

ইতিহাসের পাতা থেকে অবগত হওয়া যায় যে, নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র:) ইন্তিকাল করলে অসীয়ত মোতাবেক তার লাশকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারকের অতি নিকটে দাফন করা হয়।

গল্প নয় সত্যিঃ শাদ্দাদের বেহেশতের কাহিনী-

হযরত হুদ (আঃ) এর আমলে শাদ্দাদ নামে
একজন অতীব পরাক্রমশালী ঐশ্বর্যশালী
মহারাজা ছিল। আল্লাহর হুকুমে হযরত হুদ
(আঃ) তার কাছে ইসলামের দাওয়াত পেশ
করেন এবং দাওয়াত গ্রহণ করলে আখেরাতে
বেহেশত লাভ অন্যথায় দোযখে যাওয়া
অবধারিত বলে জানান। শাদ্দাদ হযরত হুদ
(আঃ) এর কাছে বেহেশত ও দোযখের


বিস্তারিত বিবরণ জানতে চাইলে তিনি
জানান। শাদ্দাদ তাকে বলল, তোমার
আল্লাহর বেহেশত আমার প্রয়োজন নেই।
বেহেশতের যে নিয়ামত ও সুখ-শান্তির
বিবরণ তুমি দিলে, অমন বেহেশত আমি
নিজে এই পৃথিবীতেই বানিয়ে নিব। তুমি
দেখে নিও।
হযরত হুদ (আঃ) তাকে হুশিয়ার করে দিলেন
যে, আল্লাহ পরকালে যে বেহেশত তৈরী
করে রেখেছেন, তোমার বানানো বেহেশত
তার ধারে কাছেও যেতে পারবেনা।
অধিকন্তু তুমি আল্লাহর সাথে পাল্লা
দেয়ার জন্য অভিশপ্ত হবে। কিন্তু শাদ্দাদ
কোন হুশিয়ারীর তোয়াক্কা করলো না। সে
সত্যি সত্যিই দুনিয়ার উপর একটি সর্ব-সুখময়
বেহেশত নির্মানের পরিকল্পনা করল। তার
ভাগ্নে জোহাক তাজী তখন পৃথিবীর অপর
প্রান্তে এক বিশাল সম্রাজ্যের অধিকারী
ছিল। অধিকন্তু পারস্যের সম্রাট
জামশেদের সম্রাজ্য দখল করে সে প্রায়
অর্ধেক দুনিয়ার প্রতাপন্বিত সম্রাটে
পরিনত হয়েছিল।
মহারাজা শাদ্দাদ সম্রাট জোহাক তাজী
কে চিঠি লিখে তার বেহেশত নির্মানের
পরিকল্পনা জানালো। অতঃপর তাকে
লিখলো যে, তোমার রাজ্যে যত স্বর্ণ-
রৌপ্য, হিরা-জহরত ও মনি-মাণীক্য আছে,
তা সব সংগ্রহ করে আমার দরবারে পাঠিয়ে
দাও। আর মিশক-আম্বর জাতীয় সুগন্ধী দ্রব্য
যত আছে, তা পাঠিয়ে দাও।
অন্যান্য রাজা-মহারাজাদের কাছেও সে
একই ভাবে চিঠি লিখলো এবং বেহেশত
নির্মানের পরিকল্পনা জানিয়ে সবাইকে
প্রয়োজনীয় নির্মান সামগ্রী পাঠানোর
আদেশ জারী করলো। পৃথিবীর সকল
অঞ্চলের অনুগত রাজা-মহারাজারা তার
নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করল।
এবার বেহেশতের স্থান নির্বাচনের পালা।
বেহেশত নির্মানের উপযুক্ত স্থান খুজে বের
করার জন্য শাদ্দাদ বহু সংখ্যক সরকারী
কর্মচারী কে নিয়োগ করল। অবশেষে
ইয়ামানের একটি শস্য শ্যামল অঞ্চলে প্রায়
একশ চল্লিশ বর্গ মাইল এলাকার একটি
জায়গা নির্বাচন করা হল।
বেহেশত নির্মানের জন্য নির্মান সামগ্রী
ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে বাছাই করা
দক্ষ মিস্ত্রী আনা হল। প্রায় তিন হাজার
সুদক্ষ কারিগর কে বেহেশত নির্মানের জন্য
নিয়োগ করা হল। নির্মান কাজ শুরু হয়ে
গেলে শাদ্দাদ তার অধীনস্থ প্রজাদের
জানিয়ে দিল যে, কারো নিকট কোন সোনা
রূপা থাকলে সে যেন তা গোপন না করে
এবং অবিলম্বে তা রাজ দরবারে পাঠিয়ে
দেয়।
এ ব্যাপারে তল্লাশী চালানোর জন্য
হাজার হাজার কর্মচারী নিয়োগ করা হল।
এই কর্মচারীরা কারো কাছে এক কণা
পরিমাণ সোনা-রূপা পেলেও তা কেড়ে
নিতে লাগল। এক বিধবার শিশু মেয়ের
কাছে চার আনা পরিমান রূপার গহণা পেয়ে
তাও তার কেড়ে নিল। মেয়েটি কেদে
গড়াগড়ি দিতে লাগল। তা দেখে বিধবা
আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ জানাল যে, হে
আল্লাহ ,এই অত্যাচারী রাজা কে তুমি তার
বেহেশত ভোগ করার সুযোগ দিও না।
দুঃখিনী মজলুম বৃদ্ধার এই দোয়া সম্ভবত
কবুল হয়ে গিয়ে ছিল।
ওদিকে মহারাজা শাদ্দাদের বেহেশত
নির্মানের কাজ ধুমধামের সাথে চলতে
লাগল। বিশাল ভূখন্ডের চারদিকে চল্লিশ
গজ জমি খনন করে মাটি ফেলে মর্মর পাথর
দিয়ে বেহেশতের ভিত্তি নির্মান করা
হল। তার উপর সোনা ও রূপার ইট দিয়ে
নির্মিত হল প্রাচীর। প্রাচীরের উপর জমরূদ
পাথরের ভীম ও বর্গার উপর লাল বর্ণের
মূল্যবান আলমাছ পাথর ঢালাই করে
প্রাসাদের ছাদ তৈরী হল। মূল প্রাসাদের
ভিতরে সোনা ও রূপার কারূকার্য খচিত ইট
দিয়ে বহু সংখ্যক ছোট ছোট দালান তৈরী
করা হল।
সেই বেহেশতের মাঝে মাঝে তৈরী করা
হয়েছিল সোনা ও রূপার গাছ-গাছালি এবং
সোনার ঘাট ও তীর বাধা পুস্করিনী ও নহর
সমূহ। আর তার কোনটি দুধ, কোনটি মধু ও
কোনটি শরাব দ্বারা ভর্তি করা হয়েছিল।
বেহেশতের মাটির পরিবর্তে শোভা
পেয়েছিল সুবাসিত মেশক ও আম্বর এবং
মূল্যবান পাথর দ্বারা তার মেঝে নির্মিত
হয়েছিল। বেহেশতের প্রাঙ্গন মনি মুক্তা
দ্বারা ঢালাই করা হয়েছিল।
বর্ণিত আছে যে, এই বেহেশত নির্মাণ
করতে প্রতিদিন অন্ততঃ চল্লিশ হাজার
গাধার বোঝা পরিমান সোনা-রূপা
নিঃশেষ হয়ে যেত। এইভাবে একাধারে
তিনশ’ বছর ধরে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।
এরপর কারিগরগণ শাদ্দাদ কে জানাল যে,
বেহেশত নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।
শাদ্দাদ খুশী হয়ে আদেশ দিল যে, এবার
রাজ্যের সকল সুন্দর যুবক-যুবতী ও বালক-
বালিকাকে বেহেশতে এনে জড়ো করা
হোক। নির্দেশ যথাযথভাবে পালিত হল।
অবশেষে একদিন শাদ্দাদ সপরিবারে
বেহেশত অভিমুখে রওনা হল। তার অসংখ্য
লোক-লস্কর বেহেশতের সামনের প্রান্তরে
তাকে অভিবাদন জানাল। শাদ্দাদ
অভিবাদন গ্রহণ করে বেহেশতের প্রধান
দরজার কাছে গিয়ে উপনীত হল। দেখল
একজন অপরিচিত লোক বেহেশতের দরজায়
দাঁড়িয়ে আছে। শাদ্দাদ তাকে জিজ্ঞেস
করল, তুমি কে?
লোকটি বললেনঃ আমি মৃত্যুর ফেরেশতা
আজরাঈল।
শাদ্দাদ বললঃ তুমি এখন এখানে কি
উদ্দেশ্যে এসেছ?
আজরাঈল বললেনঃ আমার প্রতি নির্দেশ
এসেছে তোমার জান কবজ করার।
শাদ্দাদ বললঃ আমাকে একটু সময় দাও।
আমি আমার তৈরী পরম সাধের বেহেশতে
একটু প্রবেশ করি এবং এক নজর ঘুরে দেখি।
আজরাঈল বললেনঃ তোমাকে এক মুহুর্তও
সময় দানের অনুমতি নেই।
শাদ্দাদ বললঃ তাহলে অন্ততঃ আমাকে
ঘোড়া থেকে নামতে দাও।
আজরাঈল বললেনঃ না, তুমি যে অবস্থায়
আছ, সে অবস্থায়ই তোমার জান কবজ করা
হবে।
শাদ্দাদ ঘোড়া থেকে এক পা নামিয়ে
দিল। কিন্তু তা বেহেশতের চৌকাঠ স্পর্শ
করতে পারলনা। এই অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটল।
তার বেহেশতের আশা চিরতরে নির্মূল হয়ে
গেল।
ইতঃমধ্যে আল্লাহর নির্দেশে হযরত
জিবরাঈল (আঃ) এক প্রচন্ড আওয়াজের
মাধ্যমে শাদ্দাদের বেহেশত ও লোক-লস্কর
সব ধ্বংস করে দিলেন। এভাবে শাদ্দাদের
রাজত্ব চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল।
বর্ণিত আছে যে, হযরত মুয়াবিয়ার (রাঃ)
রাজত্বকালে আব্দুল্লাহ বিন কালব নামক
এক ব্যক্তি ইয়ামানের একটি জায়গায় একটি
মূল্যবান পাথর পেয়ে তা হযরত মুয়াবিয়ার
(রাঃ) নিকট উপস্থাপন করেন।
সেখানে তখন কা’ব বিন আহবার উপস্থিত
ছিলেন। তিনি উক্ত মূল্যবান রত্ন দেখে
বললেন, এটি নিশ্চয় শাদ্দাদ নির্মিত
বেহেশতের ধ্বংসাবশেষ। কেননা আমি
রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, আমার
উম্মতের মধ্যে আব্দুল্লাহ নামক এক ব্যক্তি
শাদ্দাদ নির্মিত বেহেশতের স্থানে গিয়ে
কিছু নিদর্শন দেখতে পাবে।