**************************************************************************************************************************************************** ****************************************************************************************************************************************************

কখনো কি আপনার মনে প্রশ্ন যেগেছে যে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘূরে না কি সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘূরে!!

প্রশ্নঃ-(ক)সূর্য কি পৃথিবীর চার দিকে ঘুরে ?

জবাবঃ-(১)ইসলামি শরিয়তের প্রকাশ্য দলিলগুলো অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে- পৃথিবী নয়, সূর্যই আসলে পৃথিবীর চতুর্দিকে ঘূরে । এই ঘূরার কারনেই পৃথিবীতে দিবা-রাত্রির আগমন ঘটে। আমাদের হাতে নিম্নোক্ত
এই দলিলগুলোর চেয়ে বেশি শক্তিশালী এমন অন্য আর কোন দলিল নেই , যার মাধ্যমে আমরা সূর্য ঘূরার দলীলগুলোকে ব্যাখ্যা করতে পারি । সূর্য ঘূরার দলিলগুলো হলো –

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র আল-কোরআনে এভাবে বলেন,

(فـَااِنَّ  اللهَ يـأَتـيِ باِ لشَّـمـس مِن المَـشـرِقِ فَـأتِ بـِهـاَ مِـن المَغرِبِ)

“আল্লাহ তাআ’লা সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন । তুমি পারলে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর।” (সুরা বাকারাঃ২৫৮) সূর্য পূর্ব দিক থেকে উঠার মাধ্যমে প্রকাশ্য দলিল পাওয়া যায় যে, সূর্য পৃথিবীর উপর পরিভ্রমন করে বা সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘূরে।

জ়বাবঃ-(২) আল্লাহ তাআ’লা বলেন, (فَـالـَمَّا رَأي الشـَّمـسَ باَزِغَـةً  قَالَ هَـذََا رَبـيِّ هَـذَا أَكـبَـرُ فَـالـَمّـًا أَفَـالـَت قلَ يَاقَـومِ اِنـّي بَــرِيءُُّ مّـِمـاَّ تُـشــرٍكُــونَ (سورة النعم: 78))

“অতঃপর যখন সূর্যকে চকচকে অবস্থায় উঠতে দেখলেন তখন বললেন, এটি আমার পালনকর্তা, এটি বৃহত্তর। অতপর যখন তা ঢুবে গেল , তখন বলল হে আমার সম্প্রদায় ! তোমরা যেসব বিষয়ে শরীক কর আমি ওসব থেকে মুক্ত।” (সুরা আনআ’মঃ৭৮) এখানে নির্ধারণ হয়ে গেল যে , সূর্য অদৃশ্য হয়ে যায়। একথা বলা হয়নি যে, সূর্য থেকে পৃথিবী ডুবে গেল। পৃথিবী যদি ঘূরত তাহলে অবশ্য তা বলা হত।

জবাবঃ-(৩) মহান আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেন, (وَتَرَي الشَّمسَ اِذَا طَلَعَت تـَتَـزَا وَرُ عَـن كـَهـفِـهـِم ذَاتَ اليـَمِـينِ وَاِذَا غـَرَبـَت تـَقـرِضُهُم ذَاتَ الشـِّــمَـالِ (سورة الكهف :17)) অর্থাৎ-“তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয় , তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায় ,  তাদের থেকে পাশ কেটে বাম দিকে চলে যায় (সুরা আল-কাহাফঃ১৭)।” পাশ কেটে ডান দিকে বা বাম দিকে চলে যাওয়া প্রমাণ যে, নড়াচড়া সূর্য থেকেই হয়ে থাকে পৃথিবী থেকে নয়। পৃথিবী যদি নড়াচড়া করত তাহলে অবশ্যই বলতেন – সূর্য থেকে গুহা পাশ কেটে যায়।  উদয় হওয়া এবং অস্ত যাওয়া এখানে সূর্যকে নির্দিষ্ট করে সম্পৃক্ত করা হয়েছে । এটা থেকেও বুঝা যায় যে, আসলে সূর্যই ঘূরে , পৃথিবী নয় ।

জবাবঃ-(৪) আল্লাহ সোবহানা তাআ’লা পবিত্র আল-কোরআনে বলেন, (وَهُوَ الَّـذِي خَـلـَـقَ االَّـيلَ وَ النَّهـاَرَ وَالشـَّـمـسَ وَ القَـمَـرَ كُـلِّ فـي فَـلـَكٍ يَـسـبَحُونَ  (سورة النبِـيَاءِ :33))  “এবং  তিনিই দিবা-নিশি এবং চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন । সবাই আপন আপন কক্ষ পথে বিচরণ করে (সূরা আল- আম্বিয়াঃ৩৩) ইবনে আব্বাস বলেন, লাটিম যেমন আপন কেন্দ্র বিন্দুর চার দিকে ঘূরতে থাকে , সূর্যও তেমনিভাবে ঘূরে।

জবাবঃ-(৫) আল্লাহ বলেন-(يُغـشِـي الـلـَّيـلَ النَّـهـَارَ يَـطلـُـبُـهُ حَـثِـيـثـًا(سورة العراف :54)) অর্থ-“তিনি রাতকে আচ্ছাদিত করেন দিনের মাধ্যমে।দিন দৌড়ে দৌড়ে রাতের পিছনে আসে(সুরা আ’রাফঃ৫৪)।” এ আয়াতে রাতকে দিনের অনুসন্ধানকারী বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনুসন্ধানকারী পিছনে পিছনে দ্রুত অনুসন্ধান করে থাকে।এটা জানা কথা যে, দিবা-রাত্রি সূর্যের অনুসারী।

জবাবঃ- (৬) মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-

(خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَ الأَرضَ بِالحَقٌّ يُكَـوِّرُ اللَّيلَ علي النَّهَارِ وَيُكَوٍّرُ النَّهارَ علي اللَّيلِ وَ سَخَّارَ الشَّمسَ وَ القَمَرَ كُلُّ يَجرِي لِأَجَلٍ مُسمَّي ألَا  هُوَ العَزِيزُ الغَفَّار( سورة الجمار:5))অর্থঃ “তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দিয়ে আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দিয়ে আচ্ছাদিত করেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন। প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত।জেনে রাখুন , তিনি পরাক্রমশালী , ক্ষমাশীল(সুরা যুমারঃ৫)।” আয়াতের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, পৃথিবীর উপরে দিবা-রাত্রি চলমান রয়েছে। পৃথিবী যদি ঘুরতো তাহলে তিনি বলতেন , দিবা-রাত্রির উপর পৃথিবীকে ঘূরান। আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “সূর্য এবং চন্দ্রের প্রত্যেকেই চলমান।” এ দলীলের মাধ্যমে জানা গেল যে, সুস্পষ্টভাবেই সূর্য ও চন্দ্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করছে। এ কথা সুস্পষ্ট যে, চলমান বস্তুকে বশীভূত করা এবং কাজে লাগানো, একস্থানে অবস্থানকারী বস্তুকে কাজে লাগানোর চেয়ে অধিক যুক্তিযুক্ত।

জবাবঃ-(৭) আল্লাহ বলেন, (وَ الشَّـمـسِ وَ ضُحَاهَا وَالقـَمَـرِ اِذَا تـَلـَاهَـا(سورة الشَّمس:1-2)) অর্থঃ “শপথ সূর্যের ও তার কিরণের, শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে(সুরা আশ-শামশঃ১-২)।” এখানে বলা হয়েছে যে, চন্দ্র সূর্যের পরে আসে।পৃথিবী যদি চন্দ্র বা সূর্যের চার দিকে ঘূরত, তাহলে চন্দ্র সূর্যকে অনুসরণ করত না। বরং চন্দ্র একবার সূর্যকে, আর সূর্য একবার চন্দ্রকে অনুসরণ করত।কেননা  সূর্য চন্দ্রের অনেক উপরে।এই আয়াত দিয়ে পৃথিবী স্থীর থাকার ব্যাপ্যারে দলীল গ্রহণ করার ভিতরে চিন্তা-ভাবনার বিষয় রয়েছে।

জবাবঃ-(৮)মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন, وَ الشَّمسُ تَجرِي لِمُستَقَرِّ لَهَا) ذَلِكَ تَقدِيرُ العَزِيز العَلِيمِ , وَ القَمَرَ قَدَّرنَاهُ مَنَزِلَ حَتَّي عَادَ كَالعُرجُونِ القَدِيمِ, لَا الشَّمسُ يَنبَغَي لَهَا أَن تُدرٍكض القَمَرَ وَلَا اللَّيلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسبَحُونَ(سورة يس:38-40)) অর্থঃ “সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্ত্ন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর নির্ধারণ। চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মঞ্জিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পরাতব খর্জুর শাখার অনুরুপ হয়ে যায়। রাতের পক্ষেও দিনের অগ্রবতী হওয়া সম্ভব নয়। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে পরিভ্রমন করে(সুরা ইয়াসিনঃ৩৮-৪০)।” এখানে সূর্যের চলা এবং এই চলাকে মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর নির্ধারণ বলে ব্যাখ্যা করা এটাই প্রমাণ করে যে, সূর্য প্রকৃতই চলমান। আর এই চলাচলের কারণেই দিবা-রাত্রি এবং ঋতুর পরিবর্তন হয়। যদি পৃথিবী ঘূরত, তাহলে পৃথিবীর জন্য মঞ্জিল নির্ধারণ করা হত। চন্দ্রের জন্য নয়। সূর্য কর্তৃক চন্দ্রকে ধরতে না পারা এবং দিনের অগ্রে রাত থাকা সূর্য, চন্দ্র এবং রাতের চলাচলের প্রমাণ বহন করে।  

জবাবঃ-(৯) নবী (সাঃ) সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আবু যর (রাঃ)কে বলেছেন , أتـَدري أَينَ تذهَبُ قُلتُ اللهُ وَرَسُولُهُ  أَعلَمُ قَلَ فَااِنَّهَا تَذهَبُ حَتَّي تَسجُدَ تَحتَ العَرشِ فَتَستأَذِنَ فَيؤذَنُ لَهَا وَيُوشِكُ أَنَّ تَسجُدَ فَلَا يُقبَلَ مِنهَا وَتَستَأَذِنَ فَلَا يُؤذَنَ لَهَا يُقََالُ لَهَا ارجِعِي مِن حِيثُ جِئتِ فَتَطلُعُ مِن مَغرِبهَا

অর্থঃ “হে আবু যর! তুমি কি জান সূর্য যখন অস্ত যায় তখন কোথায় যায় ? আবু যর(রাঃ) বললেন, আল্লাহ এবং তার রাসূল (সাঃ)ই ভাল জানেন । রাসূল (সাঃ) বললেন, সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় আরশের নিচে গিয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং পুনরায় উদিত হওয়ার অনুমতি চায়।সে দিন বেশি দূরে নয়, যে অনুমতি চাইবে কিন্ত তাকে অনুমতি দেয়া হবে না । তাকে বলা হবে যেখান থেকে এসেছ , সেখানে ফেরত যাও। অতঃপর সূর্য পশ্চিম দিক থেকেই উদিত হবে।”১ এটি হবে কিয়ামতের পূর্ব মুহুর্তে। আল্লাহ সূর্যকে বলবেন, যেখান থেকে এসেছ, সেখানে ফেরত যাও।অতঃপর সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে । অতএব সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, সূর্য পৃথিবীর উপর ঘূরছে এবং এই ঘূরার মাধ্যমেই উদয়-অস্ত সংগঠিত হচ্ছে।

জবাবঃ(১০)



নোটঃ১- সহি বুখারী , অধ্যায়ঃ বাদউল খালক। মুসলিম, অধ্যায়ঃ ঈমান।
সুত্রপাত ঘটেছে

No comments:

Post a Comment