**************************************************************************************************************************************************** ****************************************************************************************************************************************************

চীনে জলের তলে ‘সিংহ নগর’


কিয়ানদাও হ্রদের পানিতে তলিয়ে যাওয়া চীনের শিচেং বা সিংহ নগর। ছবি: চায়নিজ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিনগরের অট্টালিকাগুলোতে পাথরে খোদাই করা সিংহ আর ড্রাগনের মূর্তি, আছে সুসজ্জিত নগর-ফটক, প্রশস্ত সড়কগুলো থেকে বেরিয়ে গেছে একের পর এক খিলান দেওয়া অলি-গলি-পথ। ‘প্রাচ্যের আটলান্টিস’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ওই নগরের দালানকোঠা সবই
ঠিকঠাক, কেবল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সেখানে মানুষ থাকে না। চীনের কিয়ানদাও হ্রদের পানিতে তলিয়ে যাওয়া প্রাচীন শিচেং নগরের কথা জানিয়েছে বিবিসি।
অনুপম সব স্থাপত্য-ভাস্কর্যের নিদর্শন নিয়ে পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া শিচেং নগর যেন চীনের একাংশের এক ছোট্ট ‘টাইম ক্যাপসুল’। ১৩৬৮ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করা মিং এবং কিং সাম্রাজ্যের অসাধারণ সব পাথর-মূর্তি অবিকল দাঁড়িয়ে আছে ১২০ ফুট পানির নিচে। কয়েক শতক ধরে গড়ে ওঠা শিচেং নগরের অবস্থান বর্তমান ঝেইজিয়াং প্রদেশে, সাইহাই থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে।শিচেং বা সিংহ নগরের দেয়ালে দেয়ালে আছে নানা পৌরাণিক কাহিনির সচিত্র বর্ণনা। ছবি: চায়নিজ ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
ম্যান্ডারিন ভাষায় শিচেং অর্থ ‘সিংহ নগর’। ধারণা করা হয়ে থাকে নগরের রাজপথ আর অট্টালিকাগুলোয় বিশালাকার দারুণ সব সিংহ-মূর্তির কারণেই এই নামকরণ হয়ে থাকতে পারে। গ্রিসের পুরাণ-ইতিহাসে উল্লিখিত সাগরে তলিয়ে যাওয়া আটলান্টিস নগরের মতো নয় শিচেং নগরের ইতিহাস। বাস্তব এই নগরের ট্র্যাজেডি আরও করুণ। ১৯৫৯ সালে জিন’আন বাঁধ এবং জলবিদ্যুত্ প্রকল্প নির্মাণের সময় সিদ্ধান্ত নিয়ে এই নগর তলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় প্রায় তিন লাখ মানুষকে স্থানান্তর করে চীন। সরিয়ে নেওয়া মানুষদের অনেকেরই পূর্বপুরুষেরা কয়েক শতক ধরে বসবাস করছিলেন শিচেং বা সিংহ নগরে।
২০০১ সালে চীন সরকারের এক পুরাতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের সময় বলা যেতে পারে নতুন করে ‘আবিষ্কৃত’ হয় শিচেং নগর। অনুসন্ধানে দেখা যায় পানির নিচে প্রায় অবিকৃত অবস্থায় রয়ে গেছে এই নগরের দালানকোঠা, স্থাপত্য-ভাস্কর্য। ২০১১ সালে চায়নিজ ন্যাশনাল জিওগ্রাফি পানির তলায় এই নগরের কিছু ছবি প্রকাশ করলে এ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। প্রায় আধা বর্গকিলোমিটারের প্রাচীন নগরটি পানির নিচে এতটাই অবিকৃতভাবে রক্ষা পাওয়া অনেককেই অবাক করেছে।
শিচেং বা সিংহ নগরের খিলান দেওয়া ফটকগুলোতে আছে পাথরে খোদাই সিংহ ও ড্রাগনের মূর্তি। ছবি: চায়নিজ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিগবেষকদের অনুসন্ধান এবং পানির তলায় আলোকচিত্র থেকে দেখা গেছে, শিচেং নগরের পাঁচটি নগর-ফটক অনেকটাই অবিকৃত অবস্থায় আছে। প্রশস্ত সড়কগুলোতে নানা অলি-গলি-পথ বা অট্টালিকার সামনে আছে ২৬৫টি খিলান দেওয়া ফটক। এসব ফটকে সিংহ, ড্রাগন, আগুন-পাখিসহ নানা পশু-পাখির মূর্তি এবং পৌরাণিক কাহিনির বর্ণনা খোদাই করা আছে। এখানকার কয়েকটি নগর প্রাচীর ১৬ শতকে নির্মিত। গবেষকেরা বলছেন, হূদের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণেই হয়তো বাতাস-বৃষ্টি আর সূর্যতাপের ক্ষয় থেকে রক্ষা পাচ্ছে চীনের সিংহ-নগরের স্থাপত্য।

No comments:

Post a Comment