শান্তিতে বিশ্রামের শেষ আশ্রয়টি কবরস্থান। বহু কারণে পবিত্র এবং সুরক্ষিত স্থান হিসাবে বিবেচিত হয় মানুষের করব। কিন্তু সেখানেও চুরি ডাকাতি থেকে শুরু করে গা শিউরে ওঠা ঘটনাও ঘটে। ১৮ শ শতকের পুরো সময়টাতে আমেরিকা এবং ইংল্যান্ড চিকিৎসাবিজ্ঞানের নানা গবেষণা কাজে মৃতদেহ ব্যবহার করতো। তাই মানুষের কঙ্কাল লাভজনক ব্যবসার উপকরণ হয়ে ওঠে। এখানে জেনে নিন কবরস্থানকে কেন্দ্র করে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর ৬টি ঘটনার কথা।
১. দুঃখজনক চুরি : জন স্কট হ্যারিসন ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসনের ছেলে এবং পরবর্তীকালের আরেক প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন হ্যারিসনের পিতা। ওহিও হিস্ট্রি জার্নালে ১৯৫০ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জন স্কট ১৮৭৮ সালে মারা যান এবং তাকে নর্থ বেন্ডের পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তখন কঙ্কাল চুরি বড় সমস্যা ছিল। তাই তার মৃতদেহ শক্তিশালী ভল্টের মধ্যে নিরাপদ করে কবরস্থ করা হয়। দুঃখজনকভাবে এই প্রভাবশালী মানুষটির মৃতদেহ চুরি হয়ে যায় এবং তা পরে খুঁজেও পাওয়া যায়।
২. রেহাই পাননি মহাতারকা : নির্বাক চলচ্চিত্র আমলের কিংবদন্তি চার্লি চ্যাপলিন মারা যান ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বরে। মাত্র কয়েক মাস বাদে ১৯৭৮ সালের মার্চে তার কবরটি খোলা অবস্থায় পাওয়া যায়। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চ্যাপলিনের পুরো কফিনটাই গায়েব হয়ে যায়। এটি ঘাসের ওপর দিয়ে টেনে নেওয়া হয় এবং একটি ট্রাকে তোলা হয়। এই কিংবদন্তির মৃতদেহ কে চুরি করবে তা কেউ বুঝতে পারছিলেন না। দুই মাসের অনুসন্ধানে রহস্যে সমাধান মেলে। এক বুলগেরিয়ান এবং এক পোলিশ চোর তার মৃতদেহ চুরি করেন এবং এর বিনিময়ে তার বিধবা স্ত্রীর কাছে ওই ৩ লাখ ৩২ হাজার পাউন্ড দাবি করেন (বর্তমান সময়ে তা ২.৬ মিলিয়ন ডলারের সমান)। চোর ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করত। চ্যাপলিনের স্ত্রী পুলিশের পরামর্শে ফোনে যোগাযোগ রাখতেন যেন তাদের ফোনকল ট্র্যাক করা যায়। এক সময় সুইজারল্যান্ডের একটি ফোন বুথ থেকে একজনকে আটক করা হয়। পরে চ্যাপলিনের কফিনটি কবরস্থান থেকে ১২ মাইল দূরে একটি শস্য ক্ষেতের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায়।
৩. একটি সফল চুরির ঘটনা : ১৯ শ শতকের বিজনেস টাইকুন আলেক্সান্ডার টার্নে স্ট্রুয়ার্ট মারা যান ১৮৭৬ সালে। দুই বছর পর নিউ ইয়র্কের সেন্ট মার্ক চার্চ থেকে চুরি যায় একসময়ের বিশ্বের শীর্ষ ধনীর কঙ্কাল। এটি ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ২০ হাজার ডলার দাবি করেন চোর যা বর্তমান সময়ের ৫ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। চোরকে ধরা যায়নি। অর্থ পাঠানো হয়েছিল এবং কঙ্কালও ফেরত এসেছিল।
৪. হারিয়ে গেলেন প্রেসিডেন্ট : সাইপ্রাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট তাসোস পাপাদোপোলোস ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২০০৮ সালে। রাজধানী নিকোসিয়ার দেফতেরা গ্রামের এক কবরস্থানে সমাহিত হন তিনি। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর আগেই চুরি যায় তার দেহ। ২০০৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সিমেট্রির প্রহরী দেখলেন, প্রেসিডেন্টের কবরটি ফাঁকা। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন মাস পর একই গ্রামের অন্য একটি সমাধিস্থলে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। এর পেছনের ঘটনাটি সত্যিই অদ্ভুত। এক খুনের সাজাপ্রাপ্ত আসামি তার ভাইকে এ কাজ করতে বলে। মৃতদেহ ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে জেল থেকে মুক্তি নেবেন তিনি, পরিকল্পনাটা এমনই ছিল। কিন্তু এ কাজের আরেক সঙ্গী পরিকল্পনামাফিক কাজ না করে উল্টো প্রেসিডেন্টের পরিবারের কাছ থেকে অর্থ চাওয়া শুরু করেন। একসময় ধরা পড়েন তারা।
৫. পোস্টমর্টেম পাইন : ১৮১৯ সালে ইংলিশ লেখক উইলিয়াম কবেটের ধৈর্যচ্যুতি ঘটলো। যুদ্ধবিষয়ক লেখক থমাস পাইনের মৃতদেহ শুয়ে রয়েছে নিউ ইয়র্কের সাধারণ এক সিমেট্রিতে। কবেট পরিকল্পনা করলেন, তিনি থমাসের মৃতদেহ চুরি করে ইংল্যান্ডে নিয়ে গিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে সমাহিত করবেন। কবেট তার কয়েকজন অনুসারীকে নিয়ে রাতের আঁধারে নিউ ইয়র্কের নিউ রোচেলের সমাধিস্থলে গেলেন। ভোরের আগে তারা শ্রদ্ধেয় লেখকের কফিনটি তুলে নিয়ে যেতে সক্ষম হলেন। কিন্তু পরে সব ভেস্তে গেলো। পাইনের দেহ ইংল্যান্ডে পরিকল্পনামাফিক কবরস্থ করার ফান্ড পাস হলো না। অবশেষে কবেট একটি পুরনো ট্রাঙ্কে করে নিজের কাছে রেখে দিলেন পাইনের মৃতদেহ। ১৮৩৫ সালে নিজের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রিয় লেখকের মৃতদেহ নিজের কাছে সযত্নে রেখেছিলেন কবেট। এরপর কি হয়েছিল তা কেউ সঠিকভাবে জানেন না। পাইনের কঙ্কালের কিছু অংশ খুঁজে পাওয়া গেছে। বাকি অংশের কোনো খোঁজ আজও মেলেনি।
৬. বাখারের নরখাদক : কবর চুরির ইতিহাসে সম্ভবত এটাই সবচেয়ে লোমহর্ষক ঘটনা। পাকিস্তানের পাঞ্জাবের বাখার ডিস্ট্রিক্টের দুই ভাইকে দুইবার গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তারা সদ্য কবর দেওয়া মৃতদেহ চুরি করে তার ভেতরের প্রত্যঙ্গ ভক্ষণ করতো। ২০১১ সালে মুহামাদ আরিফ এবং ফারমান আলী নামের দুই ভাইকে দুই বছরের জেল দেওয়া হয়। পাঁচটি মৃতদেহ চুরি করে এই ভয়ানক কাজ করেছিলেন তারা। তাদের বাড়িতে ভক্ষণকৃত প্রত্যঙ্গ পাওয়া যায়। হাড়গোড় পাওয়া যায় স্যুপের বাটিতে। ২০১৪ সালে আবারো তারা গ্রেপ্তার হয়। তাদের বাড়িতে একটি শিশুর মাথা পাওয়া যায়। এরপর ১২ বছরের জেল হয় তাদের।
সূত্র : লাইভ সায়েন্স
সূত্র : লাইভ সায়েন্স
No comments:
Post a Comment