সেলফোন ট্র্যাকিং আবার কি জিনিষ ? কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেলফোনের বা সেলফোনের সাথে থাকা সম্ভাব্য ব্যক্তির ফিজিক্যাল লোকেশন খুঁজে বেড় করা। এখন এটি কেন করা হয়; অবশ্যই কোন ওয়ান্টেড ব্যক্তিকে খুঁজে
পাওয়ার জন্য কিংবা ফোনটিকে খুঁজে পাওয়ার জন্য। বর্তমানে সেলফোন আমাদের জীবনের সাথে এতোবেশি জড়িয়ে
পড়েছে যে, ঘুম থেকে উঠা হতে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত এটি ব্যবহৃত হয়। বড় বড় কাজের ডিল আর সাথে বড় বড় অপরাধও এখন সেলফোনের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়। আশানুরূপ ভাবে, সেলফোন ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে অনেক অপরাধীদের বর্তমানে ধরা সম্ভব হয়ে উঠছে। তবে হ্যাকারও আপনাকে অবৈধভাবে ট্র্যাক করতে পারে, আপনার ফোনের সকল ডাটা গুলোকে অবৈধভাবে অ্যাক্সেস করতে পারে এবং আপনার সর্বনাশ ঘটাতে পারে। তো ট্র্যাকিং এর সুবিধা এবং অসুবিধা দুটোই রয়েছে, চলুন ধাপে ধাপে সমস্ত বিষয় গুলো জেনে নেওয়া যাক…
এখন পালা ঐ অপরাধীর ফিজিক্যাল লোকেশন খুঁজে বেড় করা এবং তাকে ধরে এনে জেলে পুড়ে দেওয়া। অপরাধী সাধারনত অপরাধ করার সময়ের সিম/নাম্বারকে ফেলে দেয় অথবা নষ্ট করে ফেলে, কিন্তু ফোনটি বেশিরভাগ সময় ব্যবহার করতেই থাকে। আর সে যদি ঐ ফোন ব্যবহার করে, হোক সে যতোই অন্য সিম বা অন্য অপারেটরের সিম ব্যবহার করছে, তাকে ট্র্যাক করা সম্ভব। প্রথমে অপরাধীর পুলিশের কাছে থাকা নাম্বার থেকে অপরাধীর ফোনের আইএমইআই (IMEI) নাম্বার বেড় করে নেওয়া হয়। আপনি যে অপারেটরের সিম ব্যবহার করছেন, আপনার অপারেটরের কাছে আপনার ফোন সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে এবং অবশ্যই আপনার ফোনের আইএমইআই নাম্বার রয়েছে। আইএমইআই নাম্বারকে কোন ফোনের ফিঙ্গার প্রিন্টও বলতে পারেন, কেনোনা আপনার ফোন ব্যবহার করে আপনি যেখানেই কল করুণ না কেন, আপনার আইএমইআই তথ্য সেখানে চলে যায়। এখন অপরাধী সাধারনত তার ফোনে আলাদা কোন সিম বা আলাদা অপারেটরের সিম ব্যবহার করবে। তো সে যে সিমই ব্যবহার করুক না কেন, ঐ অপারেটরের কাছে তার আইএমইআই নাম্বার চলে যাবে।
এখন পুলিশ আরো ভিন্ন ভিন্ন অপারেটরের কাছে অপরাধীর পাওয়া ফোনের আইএমইআই নাম্বার জানিয়ে জিজ্ঞাসা করবে, এই আইএমইআই এর ফোন তাদের অপারেটরে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা। অপারেটররা সহজেই এই তথ্য পুলিশকে সরবরাহ করে দেবে, যদি কোন অপারেটরে সেই আইএমইআই এর ফোন পাওয়া যায়, তবে সেই ফোনে ব্যবহৃত বর্তমান নাম্বারও পুলিশকে দিয়ে দেওয়া হয়। আর পুলিশ যখন অপরাধীর বর্তমান ব্যবহৃত নাম্বার পেয়ে যায়, তো বলতে পারেন ৫০% কাজ শেষ।
এখন অপরাধীর সেলফোন থেকে তার বর্তমান লোকেশন পাওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। আপনি যখন ফোন অন করেন, সাথে সাথে আপনার ফোন আপনার সিমের সেলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে, সিগন্যাল পাওয়ার জন্য। আপনার ফোন একসাথে অনেক টাওয়ার বা সেল থেকে সিগন্যাল পায়, কিন্তু সবচাইতে কাছের এবং স্ট্রং সিগন্যাল পাওয়া সেলের সাথে কানেক্টেড হয়। আপনার অপারেটর কিন্তু সহজেই বলে দিতে পারবে, আপনার ফোনটি এই মুহূর্তে তাদের কোন স্থানের অবস্থিত সেল টাওয়ারের সাথে কানেক্টেড রয়েছে। আপনারা যদি কেউ আগে টেলিটক সিম ব্যবহার করে থাকেন, তবে অবশ্যই লক্ষ্য করে থাকবেন, ফোনে টাওয়ারের লোকেশন প্রদর্শন করতো, এখনো এই সিস্টেম রয়েছে কিনা জানি না। যাইহোক, ব্যবহারকারীর ফোনের সিগন্যালের কোয়ালিটি এবং আশেপাশের আরো টাওয়ার থেকে তথ্য নিয়ে তার লোকেশন আন্দাজ করা সম্ভব। অপরাধীর আশেপাশের মোট তিনটি টাওয়ার থেকে সিগন্যাল নেওয়া নয় এবং সিগন্যালের উপর ত্রিভুজ আঁকার কল্পনা করে লোকেশন জানার চেস্টা করা হয়। যদিও এই পদ্ধতিতে ১০০% সঠিক লোকেশন জানা সম্ভব হয়না, তবে অনেক ভালো ধারণা যায়।
এবার হয়তো আপনি ভাবছেন, যদি ফোনকে অপরাধী এয়ারপ্লেন মুড করে রাখে তাহলে? —আপনাকে জানিয়ে রাখি, সেলফোন অপারেটিং সিস্টেমের দুইটি দিক থাকে, একটি দিক যেটা আপনার ফোন এবং নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড হয় এবং আরেকটি দিক হলো আপনার ফোনের ইউজার ইন্টারফেস। ইউজার ইন্টারফেসে যতোই দেখাক, আপনার ফোনটি এয়ারপ্লেন মুডে রয়েছে, কিন্তু আপনার ফোনটি তারপরেও নেটওয়ার্ক থেকে পিং গ্রহন করে। আর নেটওয়ার্ক চাইলে সেই সময়ও গুরুত্বপূর্ণ লোকেশন তথ্য ফোনটি থেকে পেতে পারে। আর ফোনটি অন থাকলে এতে ফোর্স ২জি চালু করে দেওয়া হয়, কেনোনা ২জি’তে এনক্রিপশন অনেক দুর্বল তাই সহজেই পুলিশ ঐ ফোনটি থেকে আরো প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যেতে পারে।
সেলফোন ট্র্যাকিং এর ক্ষেত্রে আপনার ফোনে থাকা জিপিএস অনেক বেশি সহায়ক হিসেবে কাজ করে। অপরাধী যদি কোন স্মার্টফোন ব্যবহার করে আর তাতে যদি জিপিএস লাগানো থাকে তবে পুলিশের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। জিপিএস থাকলে সেল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ না করেও ফোনের লোকেশন পাওয়া সম্ভব। পুলিশের কাছে কিছু সিস্টেম সেটআপ থাকে যার মাধ্যমে তারা ফোনের জিপিএস থেকে অ্যাক্সেস নিয়ে লোকেশন ট্র্যাক করে। কিন্তু বিভিন্ন দেশের পুলিশ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে জিপিএস ট্র্যাকিং করে। বড় বড় দেশের কাছে সরাসরি স্যাটেলাইট অ্যাক্সেস থাকে, ফলে তারা সহজেই তথ্য পেয়ে যায়, ফোনটি ঠিক কোন জিপিএস স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল গ্রহন করছে। আমাদের দেশের পুলিশ সাধারনত দুইভাবে জিপিএস ট্র্যাকিং করে।
প্রথমত, অপরাধীর ফোনটি যদি স্মার্টফোন হয়, তবে স্বাভাবিকভাবে সেটি হয়তো অ্যান্ড্রয়েড হবে, তখন পুলিশ এতে লগইন থাকা জিমেইল আইডিতে অ্যাক্সেস পাওয়ার চেষ্টা করে। কেনোনা গুগল আপনার ফোনের লোকেশন হিস্টোরি সেভ করে রাখে। আবার গুগলে ফোন ট্র্যাক করারও অপশন রয়েছে। তাই গুগল অ্যাকাউন্টের উপর কন্ট্রোল পেয়ে গেলে সেলফোন ট্র্যাকিং সহজ হয়ে যায়।
যদি গুগল অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোলে আনা সম্ভব না হয়, তবে আবার সেল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করা হয়। প্রত্যেকটি জিপিএস ওয়ালা ফোনে আরেকটি অপশন থাকে যেটা এ-জিপিএস নামে পরিচিত। ধরুন আপনি এমন জায়গায় রয়েছেন যেখানে পর্যাপ্ত পরিমানে জিপিএস স্যাটেলাইট নেই আপনার লোকেশন নির্ভুল করার জন্য, তখন আপনার ফোন এ-জিপিএস এর সাহায্য নেয়। এ-জিপিএস মূলত আপনার মোবাইল অপারেটর আপনাকে এই সেবা প্রদান করে থাকে আপনার জিপিএস লোকেশন নির্ভুল করার জন্য। ফলে আপনার অপারেটরের কাছেও আপনার লোকেশন তথ্য থাকে। তাছাড়া আপনি যতো লেটেস্ট সেলফোন টেকনোলজি ব্যবহার করবেন, ততোই দ্রুত আপনাকে ট্র্যাক করা সম্ভব হবে। যেমন আপনি যদি ৪জি ব্যবহার করেন, তবে আপনার একদম সঠিক লোকেশন পাওয়া সম্ভব। আবার অপরাধীর ফোনের ম্যাক অ্যাড্রেস যদি কোন ভাবে পুলিশ পেয়ে যায়, তবে সে কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করার মাধ্যমেও তার লোকেশন খোলাসা করে দেবে।
হ্যাকার মূলত আপনাকে ঠকিয়ে আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার ইন্সটল করে দেয়; এই ধরনের ম্যালওয়্যারকে মূলত স্পাইওয়্যারও বলা হয়। এই প্রোগ্রাম গুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যাতে এটি আপনার ফোনের সিস্টেমে লুকিয়ে কাজ করতে পারে এবং আপনার সকল তথ্য হ্যাকার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। আপনাকে ইমেইল করে, ওয়েবসাইট থেকে, ফেক কল করে, অথবা হ্যাকার নিজে ফিজিক্যালি আপনার ফোনে এই ম্যালওয়্যার ইনজেক্ট করিয়ে দিতে পারে। আবার আপনি নিজেই অন্য কাজের জন্য কোন অ্যাপ ডাউনলোড করলেন, কিন্তু হতে পারে সেটা আপনার তথ্য গুলোকে চুরি করছে।
স্পাইওয়্যার অ্যাপস গুলো একদিকে বৈধ, যখন পিতা মাতা তাদের সন্তানের সেলফোন একটিভিটি জানার জন্য তাদের ট্র্যাকিং করে, তখন ঠিক আছে। এমনটি এরকম অনেক সফটওয়্যার আছে যেগুলো প্যারেন্টদের জন্যই বিশেষভাবে বানানো হয়েছে। কিন্তু হ্যাকার এই ব্যাপারটি খারাপ কাজে ব্যবহার করে। হতে পারে তারা আপনার তথ্য সংগ্রহ করে আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে।
প্রথমত; আপনার ফোনে সিকিউরিটি লক ব্যবহার করুণ, যেটাকে লক স্ক্রীন লক বলেও জানেন। হতে পারে আপনার কাছের কোন ব্যক্তিই আপনার ফোনে কোন ম্যালওয়্যার ইন্সটল করে দিল, আপনার ফোনকে ট্র্যাক করার জন্য। দ্বিতীয়ত; আপনার ফোন কখনোই রুট করবেন না, কেনোনা এধরনের অ্যাপ কাজ করার জন্য বেশিরভাগ সময়ই ফোনে রুট অ্যাক্সেসের ডিম্যান্ড করে। তৃতীয়ত; কোন অনাকাঙ্ক্ষিত মেইল বা ম্যাসেজ ওপেন করবেন না এবং সেটার সাথে যদি কোন লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্ট থাকে সেটাতে ক্লিক করবেন না। মেইলটি ওপেন করার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিন, সেটা আপনার কাছে আসার কথা ছিল কিনা। যেকোনো ভাউতাবাজী অফার ওয়ালা মেইলকে বিশ্বাস করবেন না। চতুর্থত; গুগল প্লে স্টোর বাদে অন্য কোন সোর্স থেকে কোন অ্যাপ ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন, অ্যামাজন স্টোর ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু যেকোনো অ্যাপ স্টোর ব্যবহার করার আগে যাচাই করে নিন, সেটি কতটা জনপ্রিয়। পঞ্চমত; ফোনে অ্যাপ ইন্সটল করার আগে বা ইন্সটল থাকা অ্যাপস গুলোর পারমিশন চেক করে দেখুন, যাচায় করুণ সেটি অঝথা পারমিশন ডিমান্ড করে রেখেছে কিনা। ধরুন আপনি একটি ফটো এডিটর অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন, তো সাধারনভাবে ফটো এডিটর অ্যাপ ফোনের ক্যামেরা, মাইক, ফাইলস ইত্যাদির পারমিশন চায়। কিন্তু অ্যাপটি যদি ম্যাসেজ, ইমেইল, কন্টাক্ট ইত্যাদি পারমিশন চেয়ে বসে থাকে তবে অ্যাপটি ব্যবহার না করায় ভালো, বরং অন্য অল্টারনেটিভ অ্যাপ খুঁজে দেখতে পারেন।
আপনার ফোনে একবার ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে দিলে আপনার ফোন যদি আপনি অফ ও করেন তবুও হ্যাকার আপনার ফোনের অ্যাক্সেস পেতে পারবে। কেনোনা ফোন অফ/অন হাইজ্যাক নামেও ম্যালওয়্যার রয়েছে। যাই হোক, সর্বউচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিচের উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজ লাগান এবং সিকিউরিটি প্র্যাকটিস গুলোকে চলতি রাখুন।
আর আপনি যদি কোন অপরাধী হয়ে থাকেন এবং আপনার পেছনে যদি পুলিশ বা এফবিআই লেগে থাকে, তবে আপনার কপাল সত্যিই খারাপ। আজ হোক আর কাল আপনাকে ধরা পরতেই হবে, তাই অপরাধ করার আগে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুণ, আর অপরাধ থেকে দূরে থাকুন।
পাওয়ার জন্য কিংবা ফোনটিকে খুঁজে পাওয়ার জন্য। বর্তমানে সেলফোন আমাদের জীবনের সাথে এতোবেশি জড়িয়ে
পড়েছে যে, ঘুম থেকে উঠা হতে শুরু করে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত এটি ব্যবহৃত হয়। বড় বড় কাজের ডিল আর সাথে বড় বড় অপরাধও এখন সেলফোনের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়। আশানুরূপ ভাবে, সেলফোন ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে অনেক অপরাধীদের বর্তমানে ধরা সম্ভব হয়ে উঠছে। তবে হ্যাকারও আপনাকে অবৈধভাবে ট্র্যাক করতে পারে, আপনার ফোনের সকল ডাটা গুলোকে অবৈধভাবে অ্যাক্সেস করতে পারে এবং আপনার সর্বনাশ ঘটাতে পারে। তো ট্র্যাকিং এর সুবিধা এবং অসুবিধা দুটোই রয়েছে, চলুন ধাপে ধাপে সমস্ত বিষয় গুলো জেনে নেওয়া যাক…
সেলফোন এবং সেল
সেলফোন ট্র্যাকিং সম্পর্কে আরো ভালোভাবে বুঝতে, সেলফোন কীভাবে কাজ করে সেটা পরিপূর্ণভাবে বোঝা প্রয়োজনীয়। আমাদের দেশে মূলত একমাত্র পুলিশ বা আইনি বাহিনীই সেলফোন ট্র্যাকিং এর বৈধতা রাখে। সাধারন জনগন বা আপনি আমি চাইলে যেকোনো ফোন ট্র্যাক করার অধিকার রাখি না। কোন অপরাধীকে যদি সন্দেহ করা হয় তবে তার সেলফোন ট্র্যাক করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বেশিরভাগ সময়, আমাদের দেশে ট্র্যাকিং করার সময় পুলিশ সেল অপারেটরের সাহায্য গ্রহন করেন। আর অপারেটররা পুলিশকে বিনা দ্বিধায় সাহায্য করার জন্য রাজী হয়ে যায়। পুলিশ অপরাধীর নাম্বারের কল রেকর্ড, রেজিস্ট্রেশন নেম, ফোনের সর্বশেষ লোকেশন জানতে চায় এবং অপারেটর এই তথ্য গুলো প্রদান করে সাহায্য করে। যদি অপরাধী তার আসল নাম এবং ঠিকানা ব্যবহার করে সিমকার্ডটি রেজিস্ট্রেশন করিয়ে থাকে, তবে তাকে সনাক্ত করতে আর দেরি লাগে না, তাছাড়া অপরাধীর কল রেকর্ড থেকে সে কাকে কাকে বেশি কল করেছে, তাদের সাথে যোগাযোগ করেও অপরাধীর সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।এখন পালা ঐ অপরাধীর ফিজিক্যাল লোকেশন খুঁজে বেড় করা এবং তাকে ধরে এনে জেলে পুড়ে দেওয়া। অপরাধী সাধারনত অপরাধ করার সময়ের সিম/নাম্বারকে ফেলে দেয় অথবা নষ্ট করে ফেলে, কিন্তু ফোনটি বেশিরভাগ সময় ব্যবহার করতেই থাকে। আর সে যদি ঐ ফোন ব্যবহার করে, হোক সে যতোই অন্য সিম বা অন্য অপারেটরের সিম ব্যবহার করছে, তাকে ট্র্যাক করা সম্ভব। প্রথমে অপরাধীর পুলিশের কাছে থাকা নাম্বার থেকে অপরাধীর ফোনের আইএমইআই (IMEI) নাম্বার বেড় করে নেওয়া হয়। আপনি যে অপারেটরের সিম ব্যবহার করছেন, আপনার অপারেটরের কাছে আপনার ফোন সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে এবং অবশ্যই আপনার ফোনের আইএমইআই নাম্বার রয়েছে। আইএমইআই নাম্বারকে কোন ফোনের ফিঙ্গার প্রিন্টও বলতে পারেন, কেনোনা আপনার ফোন ব্যবহার করে আপনি যেখানেই কল করুণ না কেন, আপনার আইএমইআই তথ্য সেখানে চলে যায়। এখন অপরাধী সাধারনত তার ফোনে আলাদা কোন সিম বা আলাদা অপারেটরের সিম ব্যবহার করবে। তো সে যে সিমই ব্যবহার করুক না কেন, ঐ অপারেটরের কাছে তার আইএমইআই নাম্বার চলে যাবে।
এখন পুলিশ আরো ভিন্ন ভিন্ন অপারেটরের কাছে অপরাধীর পাওয়া ফোনের আইএমইআই নাম্বার জানিয়ে জিজ্ঞাসা করবে, এই আইএমইআই এর ফোন তাদের অপারেটরে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা। অপারেটররা সহজেই এই তথ্য পুলিশকে সরবরাহ করে দেবে, যদি কোন অপারেটরে সেই আইএমইআই এর ফোন পাওয়া যায়, তবে সেই ফোনে ব্যবহৃত বর্তমান নাম্বারও পুলিশকে দিয়ে দেওয়া হয়। আর পুলিশ যখন অপরাধীর বর্তমান ব্যবহৃত নাম্বার পেয়ে যায়, তো বলতে পারেন ৫০% কাজ শেষ।
এখন অপরাধীর সেলফোন থেকে তার বর্তমান লোকেশন পাওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। আপনি যখন ফোন অন করেন, সাথে সাথে আপনার ফোন আপনার সিমের সেলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে, সিগন্যাল পাওয়ার জন্য। আপনার ফোন একসাথে অনেক টাওয়ার বা সেল থেকে সিগন্যাল পায়, কিন্তু সবচাইতে কাছের এবং স্ট্রং সিগন্যাল পাওয়া সেলের সাথে কানেক্টেড হয়। আপনার অপারেটর কিন্তু সহজেই বলে দিতে পারবে, আপনার ফোনটি এই মুহূর্তে তাদের কোন স্থানের অবস্থিত সেল টাওয়ারের সাথে কানেক্টেড রয়েছে। আপনারা যদি কেউ আগে টেলিটক সিম ব্যবহার করে থাকেন, তবে অবশ্যই লক্ষ্য করে থাকবেন, ফোনে টাওয়ারের লোকেশন প্রদর্শন করতো, এখনো এই সিস্টেম রয়েছে কিনা জানি না। যাইহোক, ব্যবহারকারীর ফোনের সিগন্যালের কোয়ালিটি এবং আশেপাশের আরো টাওয়ার থেকে তথ্য নিয়ে তার লোকেশন আন্দাজ করা সম্ভব। অপরাধীর আশেপাশের মোট তিনটি টাওয়ার থেকে সিগন্যাল নেওয়া নয় এবং সিগন্যালের উপর ত্রিভুজ আঁকার কল্পনা করে লোকেশন জানার চেস্টা করা হয়। যদিও এই পদ্ধতিতে ১০০% সঠিক লোকেশন জানা সম্ভব হয়না, তবে অনেক ভালো ধারণা যায়।
এবার হয়তো আপনি ভাবছেন, যদি ফোনকে অপরাধী এয়ারপ্লেন মুড করে রাখে তাহলে? —আপনাকে জানিয়ে রাখি, সেলফোন অপারেটিং সিস্টেমের দুইটি দিক থাকে, একটি দিক যেটা আপনার ফোন এবং নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড হয় এবং আরেকটি দিক হলো আপনার ফোনের ইউজার ইন্টারফেস। ইউজার ইন্টারফেসে যতোই দেখাক, আপনার ফোনটি এয়ারপ্লেন মুডে রয়েছে, কিন্তু আপনার ফোনটি তারপরেও নেটওয়ার্ক থেকে পিং গ্রহন করে। আর নেটওয়ার্ক চাইলে সেই সময়ও গুরুত্বপূর্ণ লোকেশন তথ্য ফোনটি থেকে পেতে পারে। আর ফোনটি অন থাকলে এতে ফোর্স ২জি চালু করে দেওয়া হয়, কেনোনা ২জি’তে এনক্রিপশন অনেক দুর্বল তাই সহজেই পুলিশ ঐ ফোনটি থেকে আরো প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যেতে পারে।
জিপিএস ট্র্যাকিং
সেলফোন ট্র্যাকিং এর ক্ষেত্রে আপনার ফোনে থাকা জিপিএস অনেক বেশি সহায়ক হিসেবে কাজ করে। অপরাধী যদি কোন স্মার্টফোন ব্যবহার করে আর তাতে যদি জিপিএস লাগানো থাকে তবে পুলিশের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। জিপিএস থাকলে সেল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ না করেও ফোনের লোকেশন পাওয়া সম্ভব। পুলিশের কাছে কিছু সিস্টেম সেটআপ থাকে যার মাধ্যমে তারা ফোনের জিপিএস থেকে অ্যাক্সেস নিয়ে লোকেশন ট্র্যাক করে। কিন্তু বিভিন্ন দেশের পুলিশ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে জিপিএস ট্র্যাকিং করে। বড় বড় দেশের কাছে সরাসরি স্যাটেলাইট অ্যাক্সেস থাকে, ফলে তারা সহজেই তথ্য পেয়ে যায়, ফোনটি ঠিক কোন জিপিএস স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল গ্রহন করছে। আমাদের দেশের পুলিশ সাধারনত দুইভাবে জিপিএস ট্র্যাকিং করে।
প্রথমত, অপরাধীর ফোনটি যদি স্মার্টফোন হয়, তবে স্বাভাবিকভাবে সেটি হয়তো অ্যান্ড্রয়েড হবে, তখন পুলিশ এতে লগইন থাকা জিমেইল আইডিতে অ্যাক্সেস পাওয়ার চেষ্টা করে। কেনোনা গুগল আপনার ফোনের লোকেশন হিস্টোরি সেভ করে রাখে। আবার গুগলে ফোন ট্র্যাক করারও অপশন রয়েছে। তাই গুগল অ্যাকাউন্টের উপর কন্ট্রোল পেয়ে গেলে সেলফোন ট্র্যাকিং সহজ হয়ে যায়।
যদি গুগল অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোলে আনা সম্ভব না হয়, তবে আবার সেল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করা হয়। প্রত্যেকটি জিপিএস ওয়ালা ফোনে আরেকটি অপশন থাকে যেটা এ-জিপিএস নামে পরিচিত। ধরুন আপনি এমন জায়গায় রয়েছেন যেখানে পর্যাপ্ত পরিমানে জিপিএস স্যাটেলাইট নেই আপনার লোকেশন নির্ভুল করার জন্য, তখন আপনার ফোন এ-জিপিএস এর সাহায্য নেয়। এ-জিপিএস মূলত আপনার মোবাইল অপারেটর আপনাকে এই সেবা প্রদান করে থাকে আপনার জিপিএস লোকেশন নির্ভুল করার জন্য। ফলে আপনার অপারেটরের কাছেও আপনার লোকেশন তথ্য থাকে। তাছাড়া আপনি যতো লেটেস্ট সেলফোন টেকনোলজি ব্যবহার করবেন, ততোই দ্রুত আপনাকে ট্র্যাক করা সম্ভব হবে। যেমন আপনি যদি ৪জি ব্যবহার করেন, তবে আপনার একদম সঠিক লোকেশন পাওয়া সম্ভব। আবার অপরাধীর ফোনের ম্যাক অ্যাড্রেস যদি কোন ভাবে পুলিশ পেয়ে যায়, তবে সে কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করার মাধ্যমেও তার লোকেশন খোলাসা করে দেবে।
হ্যাকার আক্রমণ
এতক্ষণ আলোচনা করলাম, পুলিশ এবং অপরাধী নিয়ে। কিন্তু আপনার আমার মতো সাধারন মানুষের ফোনও ট্র্যাকিং হতে পারে। এখন আপনি বা মি তো কোন অপরাধী নয়, কিন্তু অপরাধী হ্যাকার আপনার প্রাইভেসি নষ্ট করার জন্য আপনার ফোন ট্র্যাক করতে পারে। শুধু আপনার ফোন ট্র্যাক নয়, বরং আপনার ফোনের কল রেকর্ড, ম্যাসেজ, কন্টাক্ট লিস্ট, ইমেইল, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, অনলাইন অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি সহ সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নিতে পারে এবং আপনি একটুও টের পাবেন না।হ্যাকার মূলত আপনাকে ঠকিয়ে আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার ইন্সটল করে দেয়; এই ধরনের ম্যালওয়্যারকে মূলত স্পাইওয়্যারও বলা হয়। এই প্রোগ্রাম গুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যাতে এটি আপনার ফোনের সিস্টেমে লুকিয়ে কাজ করতে পারে এবং আপনার সকল তথ্য হ্যাকার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। আপনাকে ইমেইল করে, ওয়েবসাইট থেকে, ফেক কল করে, অথবা হ্যাকার নিজে ফিজিক্যালি আপনার ফোনে এই ম্যালওয়্যার ইনজেক্ট করিয়ে দিতে পারে। আবার আপনি নিজেই অন্য কাজের জন্য কোন অ্যাপ ডাউনলোড করলেন, কিন্তু হতে পারে সেটা আপনার তথ্য গুলোকে চুরি করছে।
স্পাইওয়্যার অ্যাপস গুলো একদিকে বৈধ, যখন পিতা মাতা তাদের সন্তানের সেলফোন একটিভিটি জানার জন্য তাদের ট্র্যাকিং করে, তখন ঠিক আছে। এমনটি এরকম অনেক সফটওয়্যার আছে যেগুলো প্যারেন্টদের জন্যই বিশেষভাবে বানানো হয়েছে। কিন্তু হ্যাকার এই ব্যাপারটি খারাপ কাজে ব্যবহার করে। হতে পারে তারা আপনার তথ্য সংগ্রহ করে আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে।
কীভাবে সেলফোন ট্র্যাকিং থেকে বাঁচবো?
এখানে পুলিশ আর অপরাধীর বিষয়ে আমি কোন বাঁচার টিপস শেয়ার করবো না, কেনোনা অপরাধীর জন্য আমার মনে কোন স্থান নেই। তবে আপনি যদি সাধারন ব্যক্তি হয়ে থাকে এবং হ্যাকিং এর কবল আর সেলফোন ট্র্যাকিং থেকে বাঁচতে চান তবে আর্টিকেলের এই অংশটি আপনার কাজে লাগতে পারে।প্রথমত; আপনার ফোনে সিকিউরিটি লক ব্যবহার করুণ, যেটাকে লক স্ক্রীন লক বলেও জানেন। হতে পারে আপনার কাছের কোন ব্যক্তিই আপনার ফোনে কোন ম্যালওয়্যার ইন্সটল করে দিল, আপনার ফোনকে ট্র্যাক করার জন্য। দ্বিতীয়ত; আপনার ফোন কখনোই রুট করবেন না, কেনোনা এধরনের অ্যাপ কাজ করার জন্য বেশিরভাগ সময়ই ফোনে রুট অ্যাক্সেসের ডিম্যান্ড করে। তৃতীয়ত; কোন অনাকাঙ্ক্ষিত মেইল বা ম্যাসেজ ওপেন করবেন না এবং সেটার সাথে যদি কোন লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্ট থাকে সেটাতে ক্লিক করবেন না। মেইলটি ওপেন করার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিন, সেটা আপনার কাছে আসার কথা ছিল কিনা। যেকোনো ভাউতাবাজী অফার ওয়ালা মেইলকে বিশ্বাস করবেন না। চতুর্থত; গুগল প্লে স্টোর বাদে অন্য কোন সোর্স থেকে কোন অ্যাপ ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন, অ্যামাজন স্টোর ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু যেকোনো অ্যাপ স্টোর ব্যবহার করার আগে যাচাই করে নিন, সেটি কতটা জনপ্রিয়। পঞ্চমত; ফোনে অ্যাপ ইন্সটল করার আগে বা ইন্সটল থাকা অ্যাপস গুলোর পারমিশন চেক করে দেখুন, যাচায় করুণ সেটি অঝথা পারমিশন ডিমান্ড করে রেখেছে কিনা। ধরুন আপনি একটি ফটো এডিটর অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন, তো সাধারনভাবে ফটো এডিটর অ্যাপ ফোনের ক্যামেরা, মাইক, ফাইলস ইত্যাদির পারমিশন চায়। কিন্তু অ্যাপটি যদি ম্যাসেজ, ইমেইল, কন্টাক্ট ইত্যাদি পারমিশন চেয়ে বসে থাকে তবে অ্যাপটি ব্যবহার না করায় ভালো, বরং অন্য অল্টারনেটিভ অ্যাপ খুঁজে দেখতে পারেন।
আপনার ফোনে একবার ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে দিলে আপনার ফোন যদি আপনি অফ ও করেন তবুও হ্যাকার আপনার ফোনের অ্যাক্সেস পেতে পারবে। কেনোনা ফোন অফ/অন হাইজ্যাক নামেও ম্যালওয়্যার রয়েছে। যাই হোক, সর্বউচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিচের উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজ লাগান এবং সিকিউরিটি প্র্যাকটিস গুলোকে চলতি রাখুন।
আর আপনি যদি কোন অপরাধী হয়ে থাকেন এবং আপনার পেছনে যদি পুলিশ বা এফবিআই লেগে থাকে, তবে আপনার কপাল সত্যিই খারাপ। আজ হোক আর কাল আপনাকে ধরা পরতেই হবে, তাই অপরাধ করার আগে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুণ, আর অপরাধ থেকে দূরে থাকুন।
No comments:
Post a Comment