**************************************************************************************************************************************************** ****************************************************************************************************************************************************

ফিরিশতার প্রতি বিশ্বাস (Faith on Angels)

সূধী পাঠক,জিন ফিরিশতা বলতে আমরা কিছু অশরিরী আত্মা বুঝে থাকি, বিজ্ঞান মনস্ক অনেকই এমন ধারনার কথা শুনলে মুখটিপে হাসেন; বলেন আজকের বিজ্ঞানের যুগে এমন কথা ভাবা সেই মূর্খতার যুগে ফিরে যাওয়ার সামিল। আমরা পরে দেখবো এ নিয়ে বিজ্ঞান কি বলে; আপাতত মনে রাখতে চেষ্টা করবো যে্ মুসলিম ধর্মে বিশ্বাস রাখতে হলে জিন ফিরিশতাতে বিশ্বাস রাখাও জরুরী।


ফিরিশতা সম্পর্কে পশ্চিমা বিশ্বের ধারনা, এরা মানুষের মুখাকৃতির,মহিলা জাতীয় প্রাণী, উড়ে চলার জন্য এদের দু’টি পাখা আছে,গায়ের রঙ সাদা, মাথায় মুকুট পড়ে থাকে। কিন্তু ইসলাম ধর্ম মতে এ ধরনের ধারনা ঠিক নয়। পবিত্র কোরআন থেকে আমরা জানি ‘আল্লাহ মানুষকে কাঁদামাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন; জিন সৃষ্টি করা হয়েছে ধূঁয়া বিহীন আগুন থেকে। পৃথিবীর বুকে যত জীবন রয়েছে সবই কার্বণ যৌগ।এদের জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজন হয় শক্তি, যা দ্বারা তারা কর্মময় থাকে; এই শক্তি উৎপাদিত হয় রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধামে; প্রাণীদেহের বিভিন্ন পেশী বা কোষকলায় শক্তির যোগানের মাধামে বিক্রিয়া সংঘটিত হয়ে থাকে।প্রাণীদেহে এই শক্তির জোগানের জন্য নিয়মিত আহার গ্রহন করতে হয়,খাদ্যদ্রব্য নানাপ্রকারার রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধামে চিনি ও স্নেহ জাতীয় পদার্থ উৎপাদন করে।কোন প্রাণী যখন কাজ করে তখন এই সঞ্চিত চিনিও স্নেহজাতীয় পদার্থগুলো ভেঙে শক্তির জোগান দেয়। ভাঙন প্রক্রিয়ায় চিনি জাতীয় পদার্থগুলো বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে শক্তির সাথে পানি ও কার্বনডাইঅক্সাইড উৎপাদিত হয়।এই উৎপাদন প্রক্রিকাটির নাম শ্বষণ প্রক্রিয়া; আমাদের জানামতে পৃথিবীর প্রাণীকুল জীবন্ত কোষ দ্বারা তৈরী যা মূলত কার্বন যৌগের সমন্বয়ে তৈরী;কোষের এই যৌগগুলি জটীল রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যামে সর্করা ও প্রোটিন ভেঙে প্রাণী দেহে কাজ করার মত শক্তি যোগায়, আর উচ্ছিষ্ট হিসেবে বর্জপদার্থ দেহ থেকে রেচনের মাধ্যামে বের করে দেয়।আমরা জানি জিন অনেকটা ফেরেশ্তাদের মতই আরেক প্রজাতি,যারা পৃথিবীর প্রাণীদের চেয়েও জটীল প্রক্রিয়ায় জীবন ধারন করে,তারা সম্ভবত বৈদ্যুতিক চার্জ ও চৌম্বক শক্তি উৎপাদনের সাহায্যে তাদের দৈহিক চলাচল ও কর্মোদ্দীপনা যোগায়(আল্লাহই জানেন ভাল) ।যদিও তা বিজ্ঞান সম্মত নয় তবু তাদের সৃষ্টি কাঠামো থেকে আমরা তা অনুমান করতে পারি।তবে এটি বিজ্ঞান কর্তৃক পরিক্ষীত যে চুম্বক ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক চার্জ চঞ্চল হয়। এই চঞ্চলতা কোন বিশেষ পযুক্তির মাধ্যামে সচল হওয়া অস্বাভাবিক নয়।এই উভয় শক্তিই এক অপরের পরিপূরক।আমরা অনুমান করতে পারি যে, এই দুই শক্তির ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় জিন সচল হয়(আল্লা্হই জানেন ভাল),যেমনি ভাবে প্রাণীকোষ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শক্তি উৎপদনের মাধ্যামে প্রাণী দেহকে সচল করে।


,    ফিরিশতায় বিশ্বাসকরা আমাদের আকীদার একটি অংশ।ফিরিশতারা আল্লাহর সৃষ্টি, হাদীছ অনুযায়ী তারা আলোর তৈরী। তাদের ক্ষুদা তৃষ্ণা নেই। তারা লিঙ্গবেদহীণ।আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির আগেই তাদের সৃষ্টি করেছেন। ফিরিশতাদের অবস্থিতি জানার জন্যে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে তাদের বৈশিষ্ট সম্পর্কে।আমরা হাদীছের বর্ণনা থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানতে পারি;


১.ফিরিশতারা আলোর তৈরী ও অদৃশ্য তাদের কায়া আমাদের দৃষ্টিলভ্য নয়।


মুসলিম শরীফের ২৯৯৬ নং হাদীসে বর্ণীত হয়েছে হয়রত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন যে, ফিরিশতারা আলো থেকে সৃষ্ট, যেমন জিন সৃষ্টি হয়েছে ধূঁয়াবিহীণ আগুন থেকে।


২.ফিরিশতাদের মধ্যে স্ত্রী পুরুষ নেই,তারা সকলেই আল্লাহর বন্দেগীতে মশগুল,তাদের দ্বারা কোন পাপ সংঘটিত হয়না। তারা মাতা-পিতা হীন ভাবেই সৃষ্ট। তারা পানাহার করেননা। ফিরিশ্তার সাথে আল্লাহর বন্ধু নবী ইব্রাহীম (আঃ)এর কথোপকথনে  এ বিষয়ের ধারনা পাওয়া যায়,সূরা আদ দারিয়াতের ২৬-২৮ আয়াতে মহান আল্লাহ জানিয়েছেন,


هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ


51:24 আপনার কাছে ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি?


إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ قَوْمٌ مُّنكَرُونَ


51:25 যখন তারা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বললঃ সালাম, তখন সে বললঃ সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক।


فَرَاغَ إِلَى أَهْلِهِ فَجَاء بِعِجْلٍ سَمِينٍ


51:26 অতঃপর সে গৃহে গেল এবং একটি ঘৃতেপক্ক মোটা গোবৎস নিয়ে হাযির হল।


فَقَرَّبَهُ إِلَيْهِمْ قَالَ أَلَا تَأْكُلُونَ


51:27 সে গোবৎসটি তাদের সামনে রেখে বললঃ তোমরা আহার করছ না কেন?


فَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً قَالُوا لَا تَخَفْ وَبَشَّرُوهُ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ


51:28 অতঃপর তাদের সম্পর্কে সে মনে মনে ভীত হলঃ তারা বললঃ ভীত হবেন না। তারা তাঁকে একট জ্ঞানীগুণী পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল।


সূরা হুদ এর ৭০ নং আয়াত থেকে আমরা আরও জানতে পারি যে,


فَلَمَّا رَأَى أَيْدِيَهُمْ لاَ تَصِلُ إِلَيْهِ نَكِرَهُمْ وَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً قَالُواْ لاَ تَخَفْ إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَى قَوْمِ لُوطٍ


১১:৭০ কিন্তু যখন দেখলেন যে, আহার্য্যের দিকে তাদের হস্ত প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তিনি সন্ধিগ্ধ হলেন এবং মনে মনে তাঁদের সম্পর্কে ভয় অনুভব করতে লাগলেন। তারা বলল-ভয় পাবেন না। আমরা লূতের কওমের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।


উপরের আয়াত গুলিতে দেখা যাচ্ছে,ফিরিশ্তারা পোনাহারে অব্যস্ত নয়।তাদের মধ্যে কোন ভাবাবেগ কাজ করেনা যা পৃথিবীর প্রানীদের একটি সহজাত বৈশিষ্ট।


৭. মুনকীর নকীর নামের দুই ফিরিশ্তা মৃত্যুর পর মৃতকে জিজ্ঞাসাবাদের দ্বায়িত্বে নিয়োজিত। পবিত্র কোরআন বলছে, প্রতিটি মানুষের জন্যে দুইজন করে প্রহরী ফিরিস্তা নিয়োজিত আছে যারা মানুষের প্রতিটি কাজ ও কথা নথিভুক্ত করে।তার মানুষের ডান ওবাম কাধে অবস্থান করে। সূরা ক্কাফ এর ১৭-১৮ আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,


إِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِينِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيدٌ


৫০:১৭ যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে।


مَا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ


৫০:১৮ সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।


সূরা আল ইনফিতার এর ১০-১১ আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,


وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ


৮২:১০ অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে।


كِرَامًا كَاتِبِينَ


৮২:১১ সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ।


সম্মানিত ফিরিশ্তাদের মধ্যে জিবরাইল (আঃ) এর কাজ আল্লাহর নির্দেশ নিয়ে নবী রসুলদের কাছে যাতায়াত করা; ইসরাফিল (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন। মিকাইল (আঃ) বৃষ্টি ও সৃষ্টি জগতের যাবতীয় ব্যবস্থাদি করার দ্বায়িত্বে রয়েছেন। আযরাইল (আঃ) মানুষের প্রাণ হরণের দ্বায়িত্বে রয়েছেন। কিছু ফেরেস্তা নিযুক্ত রয়েছে বেহেশত এর দ্বায়িত্বে,কতক রয়েছেন দোযখের পাহারায়,যাদের সংখ্যা ১৯ এবং।তাদের সর্দার হলেন মালেক; সূরা আল মুদ্দাসসিরের ৩০ নং আয়াতে এই সংখ্যার বর্ণনা দিয়েছেন পবিত্র কোরআনের এক অলৌকিক ইঙ্গিতের মাধ্যামে,


عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ


৭৪:১৯ এর উপর নিয়োজিত আছে উনিশ (ফেরেশতা)।


সূরা আল বাক্কারার ১০২ নং আয়াতে মহান আল্লাহ হারুত ও মারুত সম্পর্কে বলেছেন,


وَاتَّبَعُواْ مَا تَتْلُواْ الشَّيَاطِينُ عَلَى مُلْكِ سُلَيْمَانَ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَـكِنَّ الشَّيْاطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولاَ إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلاَ تَكْفُرْ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ وَمَا هُم بِضَآرِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلاَّ بِإِذْنِ اللّهِ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنفَعُهُمْ وَلَقَدْ عَلِمُواْ لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنْ خَلاَقٍ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْاْ بِهِ أَنفُسَهُمْ لَوْ كَانُواْ يَعْلَمُونَ


২:১০২ তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্নবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।


সূরা আয যুখরুফ এর ৬০ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,


وَلَوْ نَشَاء لَجَعَلْنَا مِنكُم مَّلَائِكَةً فِي الْأَرْضِ يَخْلُفُونَ


৪৩:৬০ আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের থেকে ফেরেশতা সৃষ্টি করতাম, যারা পৃথিবীতে একের পর এক বসবাস করত।


ফিরিশ্তাদের গতি


আমাদের জানা মতে সবচেয়ে দ্রুত গতিসম্পন্ন হল আলো,ফিরিশ্তারা তারচেয়ে দ্রুত গতি সম্পন্ন। পবিত্র কোরআনে বিশেষ করে জিনদের কথা বলা হয়েছে, সূরা আল নমলের ৩৮-৪০ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,


قَالَ يَا أَيُّهَا المَلَأُ أَيُّكُمْ يَأْتِينِي بِعَرْشِهَا قَبْلَ أَن يَأْتُونِي مُسْلِمِينَ


২৭:৩৮ সুলায়মান বললেন, হে পরিষদবর্গ, তারা আত্নসমর্পণ করে আমার কাছে আসার পূর্বে কে বিলকীসের সিংহাসন আমাকে এনে দেবে?
قَالَ عِفْريتٌ مِّنَ الْجِنِّ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَن تَقُومَ مِن مَّقَامِكَ وَإِنِّي عَلَيْهِ لَقَوِيٌّ أَمِينٌ


২৭:৩৯ জনৈক দৈত্য-জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বে আমি তা এনে দেব এবং আমি একাজে শক্তিবান, বিশ্বস্ত।


قَالَ الَّذِي عِندَهُ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَن يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ فَلَمَّا رَآهُ مُسْتَقِرًّا عِندَهُ قَالَ هَذَا مِن فَضْلِ رَبِّي لِيَبْلُوَنِي أَأَشْكُرُ أَمْ أَكْفُرُ وَمَن شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيٌّ كَرِيمٌ


২৭:৪০ কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে জানুক যে, আমার পালনকর্তা অভাবমুক্ত কৃপাশীল।


নবী রসুলদের কাছে উপস্থাপিত কোন প্রশ্নের জবাব জিবরীল (আঃ) কেই  আল্লাহর কাছ থেকে নিয়ে আসতে হত,সকল ফিরিস্তাদের মধে তার উপর বিশেষ দ্বায়িত্ব ছিল আল্লাহর অবতীর্ণ বাণী নবী রসুলদের কাছে বয়ে নিয়ে আসা।এই দ্বায়ীত্ব পালনকারীদেরকে আল রুহ আল আমিন বলেও অভিহিত করেছেন।


ফিরিস্তাদের ক্ষমতা


মহান আল্লা ফিরিস্তাদেরকে যথেষ্ট ক্ষমতা দিয়েছেন,তন্মধ্যে ১. বিভিন্ন আকৃতি ধারন, অর্থাৎ তারা নিজের আকৃতি ছাড়াও অন্যান্ন আকৃতি ধারণ করতে পারে। আল্লাহ জিব্রীল (আঃ) কে বিবি মরিয়মের কাছে পাঠিয়ে ছিলেন মানুষের বেশে; সূরা মারইয়াম ১৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন,


قَالَتْ إِنِّي أَعُوذُ بِالرَّحْمَن مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيًّا


১৯:১৭ অতঃপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো। অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্নপ্রকাশ করল ।


ফিরিশ্তা হযরত ইব্রাহিম (আঃ)এর কাছেও মানব রূপে এসেছিলেন, যতক্ষণ না তারা পরিচয় দিলেন ততক্ষণ ইব্রাহীম (আঃ) তাদেরকে চিনতে পারেননি। লুত (আঃ) এর কাছে খুব মনোরম চেহারায় যুবকরূপে এসেছিলেন। নবী মোহাম্মদ(সাঃ)এর কাছে জিবরীল (আঃ)আসতেন নানা বেশে। কখনো কখনো তার এক প্রিয় সহাবী দীয়াহ আল কালবির চেহারায় আসতেন,তিনি ছিলেন দেখাশুণায় খুব সুন্দর।কখনো কষনো বেদুইনদের চেহারায় আসতেন।


বৈজ্ঞানীক মতামত


আমরা মনে করিনা যে, উপরে ফিরিশ্তাদের যে বর্ণনা পাওয়া গেল তার সাথে আধুনীক চিন্তাধারার কোন প্রকার অসঙ্গতি রয়েছে,কারণ উপরের বক্তব্যের বর্ণনাকারী ও তার অনুসারী এবং আধুনীক বিজ্ঞান উভয়ই সত্যানুসন্ধানী। সত্য সকল ক্ষেত্রেই সত্য। ইসলামী চিন্তাবিদদের অনেকেই ফিরিস্তাদেরকে যেভাবে বর্ণনা করছেন,তা প্রায় বৈজ্ঞানীক চিন্তাধারার কাছাকাছি। অনেকটা বিজ্ঞানের পরিভাষায় রেডিও তরঙ্গের সাদৃশ বর্ণনা। আমাদের ইচ্ছা ও চেষ্টা হল ফিরিস্তাদের সম্পর্কে একটা পরিস্কার ধারনা পাওয়া যাদেরকে মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন ভিন্নভাবে প্রাকৃতিক নিয়ম নীতির সাথে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে;প্রাকৃতিক নিয়ম নীতি,প্রাকৃতিক শক্তি সবই সৃষ্টি করেছেন মহাবিশ্বের সুসামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে।


মালাইকাহ্ থেকে মালাক (আলিফ-লাম-কাফ অথবা মীম লাম কাফ) শব্দ দ্বারা ফিরিশ্তা বুঝায়; কিন্তু শব্দটির সাধারন পরিচিতি কোরআনিক ধারনা থেকে অনেকটাই ভিন্ন। বিজ্ঞ ব্যাক্তিদের অনেকেই মনে করেন,এই শব্দটির মূল আলাকুন,যার অর্থ সংবাদ বহন করা; আর আল মালাইকা এর অর্থ সংবাদ বাহক। ইবনে ফারিস এর মতে আলাকা শব্দের অর্থ কোন কিছু চিবানো। আবার পবিত্র কোরআন মতে জিন হল ধূঁয়া বিহীন আগুন থেকে সৃষ্ট। কিন্তু কোরআনে ফিরিস্তাদের সৃষ্টি প্রসঙ্গে কোন সুস্পষ্ট ধারনা দেওয়া হয়নি।


সূধী পাঠক, পবিত্র কোরআনের বর্ণনা থেকে আমরা জেনেছি, মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে,জিন সৃষ্টি করেছেন ধূয়া বিহীন আগুন থেকে। কিন্তু ফিরিশ্তাদের সৃষ্টি সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা পাওয়া যায়না। আমরা যদি মানুষ ও জিন সৃষ্টির বিষয়টি পর্যালোচনা করি তাহলে হয়তোবা ফিরিশ্তাদের সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পাওয়া যেতে পারে। লা হয়েছে মানুষকে আল্লাহ কাঁদা মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন; বিজ্ঞান কথাটি না মানলেও তারা পরীক্ষা নীরিক্ষার ফলাফল থেকে বলছেন প্রাণীকোষ সৃষ্টির সকল উপাদান কাঁদামাটিতে বিদ্যমান। পৃথিবীতে প্রাণীকুলের দেহ তাপমাত্রা ভূপৃষ্টের তাপমাত্রার সাথে সমঞ্জস্যপূণৃ। দেখা যায় তাপমাত্রার সমান্য পরিবর্তনে প্রাণীকুল অতীষ্ঠ হয়ে উঠে। পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রাণীকুলের সৃষ্টি শৈলী বিজ্ঞানের নখদর্পণে। বিজ্ঞানের হাতে প্রমান না থাকলেও বিজ্ঞানীরা নক্ষত্র পৃষ্ঠে প্রাণী থাকার বিষয় নিয়ে ভাবছেন। আমরা জিন প্রসঙ্গে আলোচনায় দেখেছি বিজ্ঞানীরা নক্ষত্র পৃষ্ঠে প্লাজমা দ্বারা গঠিত প্রাণীর অস্তিত্ব নিয়ে অনেকেই একমত হয়েছেন। অন্যদিকে মহান আল্লাহ ১৪ শত বছর আগে অবর্তীর্ণ কোরআনে বলেছেন,জিন ধুঁয়াহীন আগুন থেকে সৃষ্ট। সূধী পাঠক ধূঁয়াহীন আগুন বলতে আমরা কি বুঝি? ধূয়াহীণ আগুন হল সেই আগুন,যে আগুন থেকে কার্বণডাইঅক্সাইড গ্যাস ও জ্বালানী বষ্মের মিহিগুড়া উক্ষিপ্ত হয়না; যা ধূঁয়ার সৃষ্টি করে। অর্থাৎ কার্বণ যৌগ বিহীন জ্বালানী দ্বারা প্রজ্জ্বলিত আগুনকে ধূঁয়া বিহীন আগুন বলা যেতে পারে; সে ক্ষেত্রে জ্বালানী হতে পারে হা্ইড্রোজেন,হিলিয়াম ইত্যাদি। আমরা জানি এধরনের জ্বালানী নক্ষত্র পৃষ্ঠে রয়েছে;ফলে বলা যেতে পারে নক্ষত্র পৃষ্ঠ জিনদের উপযুক্ত আবাস স্থল। ফলে আমরা ধরে নিতে পারি জিণ নক্ষত্র রাজ্যের অধিবাসী;কারণ তাদের উৎপত্তিগত ইতিহাস থেকে বুঝা যায় যে,পৃথিবী এদের উপযুক্ত আবাসস্থল নয়। আমরা মহাজাগতিক সুড়ং প্রবন্ধে দেখেছি তারা  মহাকাশের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে চলাচলের সময় ওয়ার্মহোল বা মহাজাগতিক সুড়ং ব্যবহার করে।


কোন কোন বিজ্ঞ ব্যাক্তি বলছেন মালাইকা শব্দের শব্দমূল ‘মালকুন’ যার অর্থ ফোর্স বা শক্তি। আবার কেউ কেউ আরও বিশেষায়িত করে বলছেন যে,মালাইকা হল ফোর্স বা শক্তি,যাদেরকে বিশেষ দ্বায়িত্ব পালনে সৃষ্টি করা হয়েছে। আবার মানুষের মধ্যেও যাদেরকে বিশেষ দ্বায়িত্ব কর্তব্য দেওয়া হয়েছে তাদেরকেও বলা হয় ‘মালিকুন’। ১৯৫০ সালে মিশরীয় মুফতি মুহাম্মদ আবদুহু তার ‘আলমিনার’ তফসির গ্রন্থে লিখেছেন‘আমাদের মহাবিশ্বে প্রত্যেকেরই কোন না কোন মৌলিক শক্তি রয়েছে যা দ্বারা সে প্রকৃতিতে অবস্থান করে,বেঁচে থাকেএবং ভারসাম্যতা রক্ষা করে’।ভারতীয়  স্যার সৈয়দ আহমেদ খান সেখ আবদুহুর সমকালীন বর্ণনায় ফিরিস্তাদেরকে শক্তি হিসেবেই দেখিয়েছেন। লোকেরা যেখানে ‘ওহী’(Wahi) বলতে প্রাকৃতিক শক্তিকেই ধরে নিচ্ছিল,তখন কোরআনিক ভাষায় ‘ওহী’কে,মালআইকা হিসেবেই দেখানো হয়েছে। যাই হোক নাম নিয়ে কোন সমস্যা নেই যখন আমরা ফিরিশ্তাদেরকে শক্তি হিসেবেই ধরে নিয়েছি; ফলে তাদের উপস্থিতিটাই মুখ্য।


পবিত্র কোরআন অনুসারে বলা যায় ‘মালাইকা’শব্দের অর্থ সংবাদ বাহক( messengers)যা,সূরা আল হাজের ৭৫ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে;


اللَّهُ يَصْطَفِي مِنَ الْمَلَائِكَةِ رُسُلًا وَمِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ


22:75 আল্লাহ ফেরেশতা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্ব দ্রষ্টা!


অবশ্যই সংবাদ বহন তাদের কাজের একটি অংশ কারণ তারইতো নবী রসূলদের কাছে আল্লাহর নির্দেশাবলী নিয়ে আসা যাওয়া করেন। এ ছাড়াও তাদের  রয়েছে মহাবিশ্ব পরিচালনার দ্বায়িত্ব।


সূরা আন-নাজিআ’ত এ মহান আল্লাহ বলছেন,


وَالنَّازِعَاتِ غَرْقًا


৭৯:১ শপথ সেই ফেরেশতাগণের, যারা ডুব দিয়ে আত্মা উৎপাটন করে


وَالنَّاشِطَاتِ نَشْطًا


৭৯:২ শপথ তাদের, যারা আত্মার বাঁধন খুলে দেয় মৃদুভাবে;


وَالسَّابِحَاتِ سَبْحًا


৭৯:৩ শপথ তাদের, যারা সন্তরণ করে দ্রুতগতিতে


فَالسَّابِقَاتِ سَبْقًا


৭৯:৪ শপথ তাদের, যারা দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয় এবং


فَالْمُدَبِّرَاتِ أَمْرًا


৭৯:৫ শপথ তাদের, যারা সকল কর্মনির্বাহ করে, কেয়ামত অবশ্যই হবে।


উপরের আয়াত ক’টিতে ফিরিশ্তাদের কর্ম ও গতিবিধি সম্পর্কে আভাস দেওয়া হয়েছে। ৭৯:৫ আয়অতে পরিস্কার ভাবে বলা হয়েছে যে ফিরিশ্তারা সকল কর্ম নির্বাহ করে। আয়াত ৫১:৪তে একই রকম বক্তব্য এসেছে। আমরা যদি মালাইকার শব্দমূলকে আলকুন এর পরিবর্তে মালকুন ধরি তাহলে শ্রুতিমধুর হয়। এই মালকুন বা মালাইকা বা শক্তিদের কোন মুক্ত শক্তি নেই,তাদের কোন পছন্দ অপছন্দও নেই, তাদের কাজ শুধু মহান আল্লাহর দেওয়া দ্বায়িত্ব পালন করা।


فَالْمُقَسِّمَاتِ أَمْرًا


৫১:৪ অতঃপর কর্ম বন্টনকারী ফেরেশতাগণের,    - সূরা আয যারিয়াত


এই শক্তি বা ফিরিস্তারা কিভাবে কাজ করে সে সম্মন্ধে মহান আল্লঅহ মানুষকে ধারণা দিয়েছেন সূরা বাক্কারার  ৩১ তম আয়াতে;


وَعَلَّمَ آدَمَ الأَسْمَاء كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلاَئِكَةِ فَقَالَ أَنبِئُونِي بِأَسْمَاء هَـؤُلاء إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ


২:৩১ আর আল্লাহ তা’আলা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম। তারপর সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক।


মালাইকারা শুধু তাত্বিক শক্তিই নয়,তাদের দৈহিক কার্যোকারিতাও রয়েছে; সূরা হা মীম এর ৩০ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন;


إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ


৪১:৩০ নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন।


বদর ও হুনাইনের যুদ্ধে মুজাহেদীনদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য ফিরিস্তা অবতীর্ণ হয়েছিল।সূরা আল আনফালের ১২ নং ও সূর আত তওবার ২৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন,


إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَلآئِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُواْ الَّذِينَ آمَنُواْ سَأُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُواْ الرَّعْبَ فَاضْرِبُواْ فَوْقَ الأَعْنَاقِ وَاضْرِبُواْ مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ


৮:১২ যখন নির্দেশ দান করেন ফেরেশতাদিগকে তোমাদের পরওয়ারদেগার যে, আমি সাথে রয়েছি তোমাদের, সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমূহকে ধীরস্থির করে রাখ। আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়।


ثُمَّ أَنَزلَ اللّهُ سَكِينَتَهُ عَلَى رَسُولِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَأَنزَلَ جُنُودًا لَّمْ تَرَوْهَا وَعذَّبَ الَّذِينَ كَفَرُواْ وَذَلِكَ جَزَاء الْكَافِرِينَ


৯:২৬ তারপর আল্লাহ নাযিল করেন নিজের পক্ষ থেকে সান্ত্বনা, তাঁর রসূল ও মুমিনদের প্রতি এবং অবতীর্ণ করেন এমন সেনাবাহিনী যাদের তোমরা দেখতে পাওনি। আর শাস্তি প্রদান করেন কাফেরদের এবং এটি হল কাফেরদের কর্মফল।


تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ


70:4 ফেরেশতাগণ এবং রূহ আল্লাহ তা’আলার দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।


মালাইকা বা ফিরিস্তারা সর্বক্ষণ মানুষের কৃতকর্ম নথিভূক্ত করতে থাকে এবং তার সুনির্দিষ্ট ফলাফল অন্যজায়গায় স্থানান্তর করে। সূরা ইউনুস ও সূরা আয যুখরুফ এ  আল্লাহ বলছেন,


وَإِذَا أَذَقْنَا النَّاسَ رَحْمَةً مِّن بَعْدِ ضَرَّاء مَسَّتْهُمْ إِذَا لَهُم مَّكْرٌ فِي آيَاتِنَا قُلِ اللّهُ أَسْرَعُ مَكْرًا إِنَّ رُسُلَنَا يَكْتُبُونَ مَا تَمْكُرُونَ


১০:২১ আর যখন আমি আস্বাদন করাই স্বীয় রহমত সে কষ্টের পর, যা তাদের ভোগ করতে হয়েছিল, তখনই তারা আমার শক্তিমত্তার মাঝে নানা রকম ছলনা তৈরী করতে আরম্ভ করবে। আপনি বলে দিন, আল্লাহ সবচেয়ে দ্রুত কলা-কৌশল তৈরী করতে পারেন। নিশ্চয়ই আমাদের ফেরেশতারা লিখে রাখে তোমাদের ছল-চাতুরী।  -সূরা ইউনুস


أَمْ يَحْسَبُونَ أَنَّا لَا نَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُم بَلَى وَرُسُلُنَا لَدَيْهِمْ يَكْتُبُونَ


43:80 তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের গোপন বিষয় ও গোপন পরামর্শ শুনি না? হাঁ, শুনি। আমার ফেরেশতাগণ তাদের নিকটে থেকে লিপিবদ্ধ করে। -সূরা আয যখরুফ


উপরের আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ফিরিশ্তারা স্বর্গীয় শক্তি; তারা মহাবিশ্বে আল্লাহর নির্দেশাবলী নিয়ে কাজ করে; ফিরিশ্তারা আল্লাহর সংবাদ বাহক।১৯২৬ সালে সুইডিস গণিতবিদ অস্কার কেলিন বলেছেন যে আমাদের মহাবিশ্বে অনেক প্যাঁচানো মাত্রা (curled-up dimensions)রয়েছে, আর এই অতিরিক্ত মাত্রাগুলো স্বল্প ষ্থানে কুঞ্চিত হয়ে থাকে; এই স্থানগুলো এতই ছোট যে তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায়না; এমনকি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিতেও ধরা পড়েনা।তন্তু তত্ত্বের সমীকরণ থেকে দেখাযায় যে্মোদের মহাবিশ্বে নয়টি তলীয় মাত্রা ও এটি সময়ের মাত্রা রয়েছে।এখন প্রশ্ন হল কেন মাত্র তিনটি তলীয় মাত্রা(space dimensions) ও সময় মাত্র এত বিস্তৃত আর বাকী ছয়টি মাত্রা অতি ক্ষুদ্র ও কুঞ্চিত কেন? এই প্রশ্নের কোন জবাব এখনও বিজ্ঞান খুঁজে পায়নি। বিজ্ঞান বলছে এই কুঞ্চিত মাত্রায় যদি কোন প্রাণী বসবাস করে তবে তা তিন বিস্তৃত মাত্রার মানুষের দৃষ্টি লভ্য হবেনা।তাই আমরা ঐ মাত্রার প্রাণীদের দেখতে পাইনা,এমনকি তারা আমাদের যন্ত্রপাতিকেও এড়িয়ে চলতে পারে।  কোন বস্ত বা প্রাণীর সামঞ্জস্যতা হল বাহ্যিক বৈশিষ্ট,কোন কারণে অবস্থার পরিবর্তন ঘটলেও তা পরিবর্তিত হয়না;উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, স্থির অবস্থায় একটি গোলক যুক্তিসংগত ভাবেই গোল,যদি এটি ঘুরতেও থাকে তবু এটি গোলকই থাকবে। সুসামঞ্জস্য (Super symmetry) একটি সমজ্ঞস্য নীতি যা ক্ষুদ্র কণার পূর্ণ সংখ্যায় (বোসন কণার) ঘূর্ণন নীতির ও পূর্ণ অর্ধ সংখ্যায় (ফারমিওন কণার) ঘূর্ণন নীতির সাথে যুক্ত; বোসন কণা চায় মধ্যস্থ মৌলিক শক্তি হতে যখন ফারমিয়ন পদার্থ গঠন করে। বোসন একই স্থান দখল করতে পারে এবং পূর্ণ সংখ্যার স্পীন দেয়; কিন্তু ফার্মিয়ন একই স্থান দখল করতে পারেনা ও ভগ্ন সংখ্যায় স্পীন দেয়। বোসন কণা শক্তিরূপে ফোটন(Electromagnetic Force) বিচ্ছুরণ ঘটায়,আর গ্রাভিটোনস (Gravitational Force), W, Z কণা  ( Weak Nuclear Force), মেসন ও গ্লুয়ন( Strong Nuclear Force). অনেক বোসন কণা একই সময়ে একই অবস্থা প্রাপ্ত হতে পারে। ফার্মিয়ন বা পদার্থ (such as electrons, muons, tau, protons, neutrons, quarks, neutrinos) প্রদত্ত সময়ে একটি প্রদত্ত  অবস্থান নিতে পারে। আর এ কারণেই ফার্মিয়ন সেই কণা য পদার্থ তৈরী করতে পারে। একটি কঠিন বস্তুর মধ্য দিয়ে আরেকটি কঠিণ বস্ত যেতে না পারার এটিই মূল কারণ। এজন্যেই ফার্মিয়ন কোন কঠিন স্থান ভেদ করতে পারেনা যা বোসন (শক্তি কণা) পারে।


এ কারনেই বোসন কণা দিয়ে তৈরী কোন সৃষ্টিকে দেখা যায়না; সে কঠিন স্তর বেদ করে চলে যেতে পারে,মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। বোসন কণায় সৃষ্ট কোন প্রাণী বা বস্তুর খাবারের প্রয়োজন হয়না।তাদের কোন আবেগ নেই,নেই কোন জৈবীক চাহিদা। তারা বিরামহীনভাবে তাদের কর্তব্য পালন করতে পারে। তারা আলোর গতিতে ভ্রমন করতে পারে। মানুষ বা মর্তের প্রাণীকুল ফার্মিয়ন দিয়ে গঠিত; মানুষ ফিরিস্তাদের চেয়ে শ্রেষ্ট কারণ তাদের দ্বিমাত্রীক বৈশিষ্ট রয়েছে;প্রথমতঃ তাকে বিশেষায়িত করা হয়েছে একটি অমর আত্মা দিয়ে যা মহান আল্লাহ তার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন; দ্বিতীয়তঃ তাকে বিচার বুদ্ধি ও স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাধীন স্বত্তা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন; সুতরাং সে আল্লাহর নির্দেশাবলী নিজের ইচ্ছামত মানতেও পারে আবার নাও মমানতে পারে। মানুষের মধ্যে স্ত্রী-পুরুষ আলাদা ভাবে তৈরী হয়েছে,তাদের রয়েছে জৈবীক চাহিদা। অতিপ্রতিসমতার (Super Super symmetrys ymmetry)নীতিতে, বিভিন্ন প্রকারের একই ভরের সকল কণাই প্রতিসম কণা। অতি প্রতিসমতা হল সমভাবে প্রতিসম বোসন ও ফার্মিয়ন কণা। অতি প্রতিসমতার কারণে বোসন কণা দ্বারা সৃষ্ট কোন সৃষ্টি ফার্মিয়নিক সৃষ্টিতে রুপান্তরিত হতে পারে।


غَوَى وَمَا مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ


৫৩:২ তোমাদের সংগী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি।


وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَى


৫৩:৩ এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।


إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى


৫৩:৪ কোরআন ওহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।


عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَى


৫৩:৫ তাঁকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা,


فَاسْتَوَى ذُو مِرَّةٍ


53:6 সহজাত শক্তিসম্পন্ন, সে নিজ আকৃতিতে প্রকাশ পেল।


আগেকার দিনে মানুষেরা ধারণা করতো যে ফিরিস্তারা অতীব সুন্দর চেহারা হয়ে থোকে।আর এরকমটা সূরা ইউসূফ এর ৩১ নং আয়াতে পাওয়া যায়।


فَلَمَّا سَمِعَتْ بِمَكْرِهِنَّ أَرْسَلَتْ إِلَيْهِنَّ وَأَعْتَدَتْ لَهُنَّ مُتَّكَأً وَآتَتْ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِّنْهُنَّ سِكِّينًا وَقَالَتِ اخْرُجْ عَلَيْهِنَّ فَلَمَّا رَأَيْنَهُ أَكْبَرْنَهُ وَقَطَّعْنَ أَيْدِيَهُنَّ وَقُلْنَ حَاشَ لِلّهِ مَا هَـذَا بَشَرًا إِنْ هَـذَا إِلاَّ مَلَكٌ كَرِيمٌ


12:31 যখন সে তাদের চক্রান্ত শুনল, তখন তাদেরকে ডেকে পাঠাল এবং তাদের জন্যে একটি ভোজ সভার আয়োজন করল। সে তাদের প্রত্যেককে একটি ছুরি দিয়ে বললঃ ইউসুফ এদের সামনে চলে এস। যখন তারা তাকে দেখল, হতভম্ব হয়ে গেল এবং আপন হাত কেটে ফেলল। তারা বললঃ কখনই নয় এ ব্যক্তি মানব নয়। এ তো কোন মহান ফেরেশতা।


আমরা হাদীছ থেকে জেনেছি ফিরিস্তা আলোর তৈরী; বৈজ্ঞানীক তথ্য অনুযায়ী আলো হল তড়িৎচুম্বক বিকিরণ।আলো প্রতি সেকেণ্ডে ১৮৬০০০ মাইল অতিক্রম করে। তড়িৎ চুম্বক বল প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চলে;কোন ভুল-ভ্রান্তি করেনা,এই শক্তির কোন আবেগ অনুরাগ নেই বা কোন জৈবীক চাহিদাও নেই। এই তড়িৎ চুম্বক বল দৃশ্যমাত্রার বাইরে অদৃশ্য। শুধুমাত্র ৪০০০-৭০০০ অ্যাঙষ্ট্রং তরঙ্গ দৈর্ঘের বিকিরণ আমাদের চোখে দৃশ্য আলো হিসেবে ধরা পড়ে।


পবিত্র কোরআনের ধারনা মতে ফিরিস্তারা নবী ইব্রাহীম,লুত (আঃ)এর কাছে মানুষ রূপে এসেছিলেন।হাদীছ থেকে জানা যায় নবী মোহাম্মদ (সাঃ)এর কাছেও জিব্যীল (আঃ) মানুষরূপেই আসতেন। আমরা লেসার রশ্মি ও সাদা আলো ব্যবহার করে মানুষের  ত্রিমাত্রিক হলোগ্রাফিক প্রতিবিম্ব তৈরী করতে পারি যা কথা বলতে পারে আমরা জানি লেসার লাইট ও সাদা আলো তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গ। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে প্রভুত উন্নতি সাধিত হয়েছে তা রেডিও ও মাইক্রো তরঙ্গের গুণেই সম্ভব হয়েছে।এই তরঙ্গ গুলোও তড়িৎচুম্বক বল।


বর্তমান বিজ্ঞান অনুযায়ী প্রকৃতিতে চারটি প্রধান বল ক্রিয়া করে; তা হল-মহাকর্ষ বল,তড়িৎ চুম্বক বল,দূর্বল বল, শক্তিশালী বা নউক্লিয়ার বল। প্রকৃতিতে এই বলগুলো অনবরত কোনরকমের ভুল-ভ্রান্তি ছারা আল্লাহর নিয়ম মেনে চলে। স্টিং থিয়োরী আমাদের মহাবিশ্বে মহুমাত্রার ধারনাকে অনুমোদন দেয়’এবং তা পদার্থবিদ্যার নীতিকে আগ্রাহ্য করেনা। জীবন্ত প্রাণীদের অভিজ্ঞতা মুধুমাত্র ত্রিমাত্রার অবস্থানে যেখানে সময় আরেকটি মাত্রা হিসেবে এগিয়ে চলছে। আমরা তাদেরকে হৃদয়ঙ্গম করিনা।এছাড়াও মহান আল্লাহ বলেছেন,অসংখ্য ফিরিস্তা আমাদের চারিদিকে থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে থাকে। আমরা কি তাদের দেখতে পাই? সূরা আল আনামের ৬১ নং আয়াতে মহানা আল্লাহ বলছেন,


وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ وَيُرْسِلُ عَلَيْكُم حَفَظَةً حَتَّىَ إِذَا جَاء أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ تَوَفَّتْهُ رُسُلُنَا وَهُمْ لاَ يُفَرِّطُونَ


৬:৬১ অনন্তর তাঁরই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমাদেরকে বলে দিবেন, যা কিছু তোমরা করছিলে। তিনিই স্বীয় বান্দাদের উপর প্রবল। তিনি প্রেরণ করেন তোমাদের কাছে রক্ষণাবেক্ষণকারী। এমন কি, যখন তোমাদের কারও মৃত্যু আসে তখন আমার প্রেরিত ফেরেশতারা তার আত্মা হস্তগত করে নেয়।


উপরের আয়াত বলছে আমাদের চারিদিকে রক্ষনাবেক্ষণকারীরা রয়েছে আমরা তাদেরকে দেখতে আমরা দেখতে পাইনা বলেই তাদের উপস্থিতি মিথ্যে নয়;অর্থাৎ তারা অন্য ডাইমেনসন বা মাত্রায় রয়েছে।সূধী পাঠক নীচে সূরা আল ইমরানের  আয়াত দু’টি দেখুন;


إِذْ تَقُولُ لِلْمُؤْمِنِينَ أَلَن يَكْفِيكُمْ أَن يُمِدَّكُمْ رَبُّكُم بِثَلاَثَةِ آلاَفٍ مِّنَ الْمَلآئِكَةِ مُنزَلِينَ


3:124 আপনি যখন বলতে লাগলেন মুমিনগণকে-তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের সাহায্যার্থে তোমাদের পালনকর্তা আসমান থেকে অবতীর্ণ তিন হাজার ফেরেশতা পাঠাবেন।


بَلَى إِن تَصْبِرُواْ وَتَتَّقُواْ وَيَأْتُوكُم مِّن فَوْرِهِمْ هَـذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُم بِخَمْسَةِ آلافٍ مِّنَ الْمَلآئِكَةِ مُسَوِّمِينَ


৩:১২৫ অবশ্য তোমরা যদি সবর কর এবং বিরত থাক আর তারা যদি তখনই তোমাদের উপর চড়াও হয়, তাহলে তোমাদের পালনকর্তা চিহ্নিত ঘোড়ার উপর পাঁচ হাজার ফেরেশতা তোমাদের সাহায্যে পাঠাতে পারেন।


সূরা আনফালের ৯ নং আয়াত বলছে;


إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُم بِأَلْفٍ مِّنَ الْمَلآئِكَةِ مُرْدِفِينَ


৮:৯ তোমরা যখন ফরিয়াদ করতে আরম্ভ করেছিলে স্বীয় পরওয়ারদেগারের নিকট, তখন তিনি তোমাদের ফরিয়াদের মঞ্জুরী দান করলেন যে, আমি তোমাদিগকে সাহায্য করব ধারাবহিকভাবে আগত হাজার ফেরেশতার মাধ্যমে।


সম্ভবত ফিরিস্তারা সকলেই একই ডায়মেনসন এর অধিবাসী।শারীরিক কায়ারূপে আসতে তাদের মাত্রা পরিবর্তণ করতে  হয়না।আর এটা সম্ভব হয় অতি প্রতিসমতার কারণে।


সৃষ্টিকাল


ফিরিস্তারা কখন সৃষ্টি হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস আমাদের জানা নেই তবে তারায়ে মানব সৃষ্টির আগেই সৃষ্ট হয়েছিল তা বুঝা যায়।পবিত্র কোরআনের সূরা বাক্কারার ৩০  নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন,


২:৩০ আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত তোমার গুণকীর্তন করছি এবং তোমার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না।


উপরের আয়াত থেকে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে ফিরিস্তাদেরকে মানুষ সৃষ্টির আগেই  সিৃষ্টি করা হয়েছে। দয়াময় আল্লাহ মুনষ সৃষ্টির আগে ফিরিস্তাদের সাথে পরামর্শও করেছেন।


সূধী পাঠক,আমরা মহান আল্লাহর এই রহস্যস্যময় সৃষ্টিগুলিনর মধ্যে একটা পারস্পরিক সম্পর্ক খুজে দেখবো।


মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে;আবার এই মানুষকে প্রাণচঞ্চল করার জন্যে তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দিয়েছেন, যাকে তিঁনি ‘রুহ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাহলে বুঝা যাচ্ছে কাদামাটি থেকে সৃষ্ট কার্বণ যৌগ থেকে তৈরী প্রাণী কোষের মধ্যে কোন প্রাণ চঞ্চলতা থাকেনা,তাকে প্রাণ শক্তি দেওয়া হয়। সূধী পাঠক বিষয়টি বিজ্ঞানের কাছেও রহস্যজনক; বিজ্ঞান বলছে,মানব ভ্রূন সৃষ্টির সাথেসাথে কিন্তু প্রাণময় হয়না; অঙ্গ পত্যঙ্গ তৈরী হলে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আকষ্মিক ভাবেই ফিটাসের মধ্যে প্রাণচঞ্চলতার সৃষ্টি হয়। এ থেকে অনুমেয় যে কোন একটা আলাদা শক্তিদ্বারা প্রাণীকোষকলা গুলো প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠে। লক্ষ্য করুন মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির বেলায় প্রাণ ফুঁকে দেওয়ার কথা বলেছেন, কিন্তু জিন সৃষ্টির বেলায় সে কথাটি বলা হয়নি।অর্থাৎ ধূম্রবিহীণ অগ্নি থেকে জিন সৃষ্টির পর তাতে আত্মা ফুকে দেওয়ার কতা বলা হয়নি। আবার ফিরিস্তা সৃষ্টির পদ্ধতি সম্পর্কে তেমন কিছু পবিত্র কোরআনে বলা না হলেও হাদীছ থেকে জানা যায় যে ফিরিস্তা আলো থেকে সৃষ্ট; সেখানেও প্রাণ ফুঁকে দেওয়ার কোন কথা নেই।তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রাণ একপ্রকার চালিকা শক্তি যা মানুষের বেলায় অর্থাৎ কার্বণ যৌগ গঠিত দেহে তা আলাদা ভাবে সংযুক্ত হয়। যেহেতু জিন ও ফিরিস্তা সরাসরি শক্তি থেকে সৃষ্ট তাই তাদের প্রাণ আলাদাভাবে সংযুক্তির কথা বলা হয়নি।


আমরা উপরের আলোচনায় যতটুকু বুঝলাম রহস্যময় এই সৃষ্টির প্রকৃত ইতিহাস মহাবিজ্ঞানী মহান আলালার কাছেই সংরক্ষিত।আমরা শুধুমাত্র  যৎসামান্য ইঙ্গিত ও আমাদের ক্ষুদ্র মেধা দিয়ে তা আমাদের মত করে  বুঝতে চেষ্ঠা করেছি। বিজ্ঞানের আধুনিক ধারনার সাথে মিলিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছি যে, পবিত্র কোরআনে বলা কথাগুলো অত্যান্ত আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত। জানিনা আমাদের এই কথার সঠিকতা কতটুকু! তা একমাত্র মহান আল্লাহই জানেন ভাল।


প্রবন্ধটি Ibrahim B. Syed, Ph. D. এর Website:  http://WWW.IRFI.ORG  থেকে সঙ্কলিত।



                                  মুল উত্বপত্বিঃ- http://www.techtunes.com.bd/sci-tech/tune-id/284496






No comments:

Post a Comment